দেশে মেডিক্যাল শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুললেই সাধারণত প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজগুলোকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। অনুমোদনের সময় দেওয়া সব শর্ত পূরণ না করায় এখনো কয়েকটি প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ কালো তালিকাভুক্ত হয়ে আছে; যারা নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারছে না। আর সরকারি বা বেসরকারি সব ক্ষেত্রে মেডিক্যাল কলেজের পূর্বশর্ত হচ্ছে—কলেজের সঙ্গে থাকতে হবে ছাত্র-ছাত্রীর আনুপাতিক হার অনুসারে রোগীসংবলিত হাসপাতাল।
কিন্তু শুধু প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে নয়, নতুন সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোয় চলছে হাসপাতালের ঘাটতি। বিশেষ করে দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে ২১টি কলেজের নিজস্ব কোনো হাসপাতাল নেই।
কোনোমতে ধার করা হাসপাতাল দিয়ে চলছে এই মেডিক্যাল কলেজগুলো।এ ছাড়া অনেক মেডিক্যাল কলেজে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক এবং অন্যান্য জনবল ও সার্বিক পরিবেশ। এর মধ্যেই সরকার নতুন আরো চারটি মেডিক্যাল কলেজ করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র। অন্যদিকে দেশে এখন মেডিক্যাল শিক্ষার্থী, মেডিক্যাল শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও মান রক্ষায় ভারসাম্য ধরে রাখা যাচ্ছে না।
অর্থাৎ শিক্ষার্থী অনুপাতে নেই মেডিক্যাল শিক্ষার পর্যাপ্ত শিক্ষক। এর মধ্যে অধ্যয়নের মূল বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে অবস্থা বেশ করুণ।জানতে চাইলে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, যে কলেজগুলোতে হাসপাতাল ছিল না বা নেই সেগুলোতে এখন হাসপাতাল স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। কয়েকটি কলেজে হাসপাতালের জন্য প্রকল্প প্রস্তুত হচ্ছে।তবে কক্সবাজার, পাবনা, যশোর ও নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে নানা ধরনের জটিলতায় এগুলোর ক্ষেত্রে অগ্রগতি নেই। এ ছাড়া সম্প্রতি আরো চারটি কলেজের হাসপাতালের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে।কয়েকটি হাসপাতাল এখনো সদর হাসপাতালের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রাকটিক্যাল সামলাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কলেজগুলোর ক্ষেত্রে মানগত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
শিক্ষকসংকট কাটাতে আমরা বিকল্প হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরই আবার চুক্তিতে কাজে লাগাচ্ছি। এ ছাড়া প্রমোশনও দেওয়া হচ্ছে। তবু ঘাটতি থাকছেই।’দেশের মেডিক্যাল কলেজগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্বাস্থ্যশিক্ষা খাতের বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, যদি দেশের মেডিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থা ও মান বাঁচাতে হয় তবে এখনই আর একটিও মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা ঠিক হবে না। তাঁদের ভাষায়, আশপাশের দেশের তুলনায় আমরা এমনিতেই অনেক বেশি মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করে ফেলেছি,যেখান থেকে মানহীন অসংখ্য ডাক্তার বের হচ্ছে আর মানহীন চিকিৎসা বাড়ছে বা প্রশ্ন উঠছে। এই বিশেষজ্ঞরা বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যেখানে প্রতি ২৪ লাখ জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে একটি মেডিক্যাল কলেজ, পাকিস্তানে ১৮ লাখ জনসংখ্যায় জন্য একটি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে,সেখানে বাংলাদেশে ১৩.৮ লাখ জনসংখ্যার জন্য একটি মেডিক্যাল কলেজ আছে। এরপর আরো চারটি করার কথা বলা হচ্ছে।