করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ রয়েছে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও। এগুলোতে আটকে গেছে শত শত পরীক্ষা। সৃষ্টি হচ্ছে সেশনজটের। সম্প্রতি অন্তত দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। দুটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই করোনা পরিস্থিতিতেও একাডেমিক পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ইউজিসির অনুমতি চেয়েছে।
এ অবস্থায় অন্তত স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আগামী ১৩ ডিসেম্বর রোববার বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
সম্প্রতি দুটি বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষার সার্কুলার দিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এরপরই অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষা আটকে থাকা শিক্ষার্থীরা নড়েচড়ে বসেছেন। বিশেষ করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা এবারের বিসিএস হাতছাড়া করতে চাইছেন না। গত ৩০ নভেম্বর ৪২তম ও ৪৩তম বিসিএসের সার্কুলার দেয় পিএসসি। এর মধ্যে ৪২তম বিসিএসটি বিশেষ। এর মাধ্যমে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ হবে। অন্যদিকে ৪৩তম সাধারণ বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে এক হাজার ৮১৪ জন কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এই বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০, পুলিশ ক্যাডারে ১০০, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ২৫, শিক্ষা ক্যাডারে ৮৪৩, অডিটে ৩৫, ট্যাক্সে ১৯, কাস্টমসে ১৪, সমবায়ে ২০, ডেন্টাল সার্জন ৭৫ এবং অন্যান্য ক্যাডারে ৩৮৩ জনকে নিয়োগ করা হতে পারে। দ্রুত এমবিবিএস অথবা মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা না হলে অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর হাতছাড়া হয়ে যাবে এই দুই বিসিএস।
ইউজিসির গড়পড়তা এক হিসেবে দেখা গেছে, কভিডের ছোবলে দেশের ৪৬ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কোর্সের শুধু ২০ থেকে ২২ হাজার পরীক্ষাই এখন স্থগিত হয়ে গেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও সৃষ্টি হয়েছে একাডেমিক সংকট। এখানে চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা গত মার্চেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই থেকে পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষা আটকে গেছে করোনার কারণে। করোনায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাস কোর্স দ্বিতীয় বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষ ও মাস্টার্স ফাইনালের পরীক্ষাও স্থগিত হয়েছে। ডিগ্রি পাস কোর্সে প্রতিটি বর্ষে ৩৪টি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। গত আগস্ট পর্যন্ত মাস্টার্স প্রিলিমিনারি, অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষা হওয়ারও কথা ছিল। প্রতিটি বর্ষের ৩১টি বিষয়ে পরীক্ষা ছিল। করোনার কারণে এই পুরো পরীক্ষাসূচিই স্থগিত হয়ে গেছে। চাকরির বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় দুর্ভাবনায় পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।
এ অবস্থায় উপাচার্যদের কপালেও পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। তারা বলছেন, গত সাত-আটটি ব্যাচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো সেশনজট ছাড়াই শিক্ষাজীবন নির্বিঘ্নে শেষ করেছে। তবে চলতি বছর করোনাভাইরাসের ছোবলে পাল্টে গেছে আগের সেই চিত্র। আগস্ট থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু হলেও আটকে গেছে শত শত পরীক্ষা। ডিনরা বলছেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে কোর্স পড়ানো শেষ করে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করলেও অন্তত এক বছরের সেশনজটে পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের। কভিড-১৯-এর সংক্রমণ প্রথমবারের মতো সেশনজট সৃষ্টি করেছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে জানা গেছে, দেশে ৪৬টি সরকারি এবং ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন ৪১ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন লাখ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার লাখ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ লাখ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ লাখ এবং ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে আরও এক লাখ ছাত্রছাত্রী পড়ছেন। করোনায় বিভিন্ন বর্ষের সেমিস্টার, ইনকোর্স ও বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। বিশেষ করে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের সংকট বেশি। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শেষ হলে তারা এতদিনে চাকরির বাজারে ঢুকে যেতেন। কিন্তু কভিড তাদের জীবনে ঘোর অন্ধকার ডেকে এনেছে।
এর মধ্যে গত রোববার (৬ ডিসেম্বর) ইউজিসির মাসিক বৈঠক হয়েছে। সেখানে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ জানিয়েছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ একাডেমিক কাউন্সিল, ডিনস কমিটি এবং অন্যান্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে একাডেমিক পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ইউজিসির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ করছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি প্রয়োজন। তাহলে এই শিক্ষার্থীরা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এসব কারণে ১৩ ডিসেম্বরের বৈঠক ডাকা হয়েছে।