প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সততা, দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে মেরিন গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে সর্বোচ্চ শিক্ষাটা গ্রহণ করা দরকার, সেভাবেই প্রশিক্ষিতও হবে। তাই সেই সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামস্থ বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে ৫৫ ব্যাচের ক্যাডেটদের মুজিববর্ষ গ্র্যাজুয়েশন প্যারেডে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ক্যাডেটরা আজ নতুন জীবনে পদার্পণ করবেন, সততা, দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যাতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।’ তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘সমুদ্রচারণ বিষয়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং, খুব কঠিন একটা দায়িত্ব। কিন্তু দায়িত্বটা পালন করার মতো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তোমরা কর্মক্ষেত্রে যোগ দেবে।’ তিনি বলেন, জাতির পিতার হাতেগড়া এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় তার সরকার পেয়েছিল। কাজেই, তা উন্নত করবার জন্য ব্যাপক কর্মসূচিও তার সরকার বাস্তবায়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি’-সরকারি পাঁচটি ও বেসরকারি ছয়টিসহ সমুদ্র—বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী, আমরা আরো চারটি মেরিন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছি। যা এ বছরেই চালু হচ্ছে। তিনি বলেন, তার সরকার জাহাজ চলাচলে উচ্চতর শিক্ষার প্রবর্তনের জন্য ২০১৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ প্রতিষ্ঠা করেছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষার বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আওতায়, তোমাদের বিদ্যমান তিন বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব মেরিটাইম সাইন্স পাশ ডিগ্রি কোর্সকে, চার বছর মেয়াদি অনার্স কোর্সে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রবর্তন করা হয়েছে ‘মাস্টার অব মেরিটাইম সায়েন্স’ ডিগ্রি কোর্স।
বিগত ১০ বছরে এই একাডেমির শিক্ষাদান ট্র্যাডিশনাল থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য মার্চেন্ট নেভি ট্রেনিং বোর্ডের স্বীকৃতিসহ অর্জিত হয়েছে নানাবিধ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তিনি বলেন, একাডেমির নটিক্যাল প্রশিক্ষণকে উন্নততর করার লক্ষ্যে, ২০১৯ সনে একাডেমিতে স্থাপন করা হয়েছে ‘নেভিগেশন সিমুলেটর’। পাশাপাশি, এ বছরই উন্নততর মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণের স্বার্থে চলমান রয়েছে ‘ইঞ্জিন কন্ট্রোল সিমুলেটর’ স্থাপনের প্রক্রিয়া। অর্থাত্ এই একাডেমিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ আমরা দিতে যাচ্ছি যাতে আমাদের ক্যাডেটরা দেশে এবং বিদেশে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের নদীগুলোতে নাব্য ফিরিয়ে এনে এই নদীমাতৃক বাংলাদেশের নৌপথকে আরো উন্নত এবং আরো সচল করে দিচ্ছি, যেন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্য পরিবহন খুব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে করতে পারি। এই বিষয়টিতে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি। তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরে কেবল নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নৌপথ ব্যবহারে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে।