শিরোনাম
  • কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষার কবে, জানা যাবে ২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, যেভাবে জানা যাবে দায়িত্ব নিয়েই যা বললেন বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্য নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতি মূল্যায়ন, মিড ডে মিল চালুর সুপারিশ করেছে গণস্বাক্ষরতা অভিযান এইচএসসি পরীক্ষার সংশোধিত কেন্দ্র তালিকা প্রকাশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হলো আজ থেকে এক লাখ শিক্ষক নিয়োগে গণবিজ্ঞপ্তি চলতি মাসেই শনিবার স্কুল খোলার বিষয়ে আগামী বছর নতুন সিদ্ধান্ত আজ মহান স্বাধীনতা দিবস: গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রচনার সূচনা দিন নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় মিড টার্ম ও বার্ষিক চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে পাঁচ ঘণ্টার
    • কলেজ
    • অবসরের পরও অধ্যক্ষ এবং প্রধান শিক্ষক থাকা যায় ?

    অবসরের পরও অধ্যক্ষ এবং প্রধান শিক্ষক থাকা যায় ?

    অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর তার ওই পদে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ নেই। অধ্যক্ষের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে উপাধ্যক্ষ বা জ্যেষ্ঠতম ৫ জন শিক্ষকের মধ্য থেকে একজনকে দায়িত্ব দিতে হবে। তবে অবসরের পরও শুধু ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনের নিরিখে সর্বোচ্চ এক বছর সাধারণ শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তাদের বেতন-ভাতা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না তারা।

    এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষক সর্বোচ্চ ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরি করতে পারেন। কিন্তু নিয়ম ভেঙে বর্তমানে দেশের শতাধিক বড় বড় স্কুল-কলেজে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করছেন। যাদের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের সংখ্যাই বেশি। শুধু গভর্নিং বডি বা বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি নিয়ে তারা চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়ম ভেঙে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাদের কিছু অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অনুমোদন দিচ্ছে।

     

    সাধারণত একজন অধ্যক্ষ অবসরে যাওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সাধারণ শিক্ষক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অনুমোদন আনা হয়। এরপর তাকে জ্যেষ্ঠ ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে সিনিয়র দেখিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা পুরোপুরিই বিধিবহির্ভূত।

    সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, অবসরে যাওয়ার পরও পদ না ছাড়ায় নতুনদের প্রতিষ্ঠান প্রধান পদে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া একজন অধ্যক্ষ এক বছরে কমপক্ষে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকার বেতন-ভাতার সুবিধা পেয়ে থাকেন, যা সাধারণত প্রতিষ্ঠানকেই বহন করতে হয়। অথচ নিয়মিত অধ্যক্ষ থাকলে তা সরকারই বহন করত।

    সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূলত বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই যাদের আয় অনেক বেশি, তাদের ক্ষেত্রেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ঘটনা ঘটে থাকে। এর পেছনে থাকে গভর্নিং বডি বা বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের কারসাজি। কারণ ওই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনসহ নানা বিষয়ে গভর্নিং বডির সঙ্গে অধ্যক্ষের যোগসাজশ থাকে। আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি সাধারণত গভর্নিং বডির সব কথাই মেনে চলেন। এতে অনিয়ম-দুর্নীতির বেশি সুযোগ সৃষ্টি হয়।

    গত ২৯ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইনস্টিটিউটসমূহে এক বছর বা তার অধিক সময় ধরে যারা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কর্তৃক প্রেরিত তথ্যের ভিত্তিতে), তাদের এ দায়িত্ব পালন ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজশিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলি রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯’-এর পরিপন্থী হওয়ায় দায়িত্ব পালনের আর কোনো সুযোগ নেই।

    প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজশিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলি রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ ধারা-৪ এর ২ (র) অনুযায়ী, কলেজে অধ্যক্ষ পদ শূন্য হলে/অধ্যক্ষের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে উপাধ্যক্ষ/জ্যেষ্ঠতম পাঁচজন শিক্ষকের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে এবং পরবর্তী ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের এক বছরের মধ্যে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সই করা কাগজপত্র ও কার্যবিবরণী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্বীকৃত অথবা গৃহীত হবে না।

    জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, ‘যেসব অধ্যক্ষ অবসরে যান তাদের আমরা সাধারণত শিক্ষক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অনুমতি দিই। দু’একটা ব্যতিক্রম ছাড়া অধ্যক্ষ হিসেবে দিই না। আর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে পারেন উপাধ্যক্ষ বা সিনিয়র পাঁচজন শিক্ষকের একজন। কিন্তু যিনি অবসরে যান তার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। আর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনে নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এসব সমস্যা যেন না হয়, সে কারণে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে পদক্ষেপ নিয়েছি।’

    কিছু ‍উদাহরন : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০ সালে চাঁদপুরের পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারকে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অনুমতি দিয়েছিল। সেই হিসেবেই ওই প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি তাকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু গত ২৯ জুনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এক বছরের বেশি সময় কেউ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করলে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজে তার স্বাক্ষর বৈধ হবে না। ফলে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ীই, রতন কুমার মজুমদারের আর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। এমনকি তিনি সরকারের যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন, সেখানেও তার থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

     

    জানতে চাইলে চাঁদপুর পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমি ২০২০ সালে অবসরে গিয়েছি। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অনুমতি দিয়েছে। যেহেতু বর্তমান প্রজ্ঞাপনের আগেই আমার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে, তাই এ প্রজ্ঞাপন আমার ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না।’ নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগের কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ দায়িত্ব গভর্নিং বডির। তারাই এ ব্যাপারে বলতে পারবে।’

    মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের বক্তব্য জানার জন্য গতরাতে একাধিকবার ফোন করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

    সূত্র জানায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরে চুক্তিভিত্তিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পেতে গত দুই-তিন বছরে অনেক আবেদন এসেছে। তারা এ সংক্রান্ত আবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিলেও সেখান থেকে এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অথচ যারা আবেদন করেছেন তারা সবাই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

    ২০২১ সালের শেষের দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বি.বি.এম. কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. দাউদ হোসেনের ২ বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আবেদন মাউশিতে জমা হয়। একই সময়ে ঢাকার দক্ষিণখানের দক্ষিণখান আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ.কে.এম ফারুকুজ্জামানের ৫ বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আবেদন জমা হয়। কিন্তু একটিরও অনুমোদন দেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

     

    সম্প্রতি মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য আমাদের কাছে প্রায়ই আবেদন আসে। কিন্তু আমরা এ ব্যাপারে কোনো অনুমতি দিই না। তবে সেই আবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখান থেকেও সাধারণত কোনো ফিডব্যাক আসে না। এরপরও যদি কেউ পদ না ছাড়ে তাহলে সেই পদ বৈধ হবে না।’

     (প্রতিবেদনটি তৈরিতে দেশ রুপান্তর থেকে সহায়তা নেয়া হয়েছে )