বেকারত্ব হলো যে অবস্থা বা পরিবেশে একজন শ্রমিক প্রচলিত মজুরিতে কাজ করতে ইচ্ছুক থাকা সত্ত্বেও যোগ্যতা অনুসারে কাজ পায় না। তবে হ্যাঁ সব ধরনের কর্মহীনতাকে অর্থনীতিতে বেকারত্ব বলা যায় না। বর্তমান সময়ে ঘরে ঘরে যেন চাকরি না-পাওয়ার হতাশা তরুণ প্রজন্মকে গ্রাস করে ফেলছে। পঁচিশ-ছাব্বিশ যখন হয় একজন শিক্ষার্থীর বয়স, তখনই সমাপ্তি ঘটে তার শিক্ষাজীবনের, তারপর শুরু হয় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই। চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বয়স সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে। সাধারণত চাকরিতে আবেদন করার বয়সসীমা ত্রিশ বছর, ব্যতিক্রম হলে যেমন শারীরিক প্রতিবন্ধী বা অন্য কোনো কারণ থাকলে বত্রিশ বছর সর্বোচ্চ। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাওয়ার জন্য হাতে থাকে সময় মাত্র চার-পাঁচ বছর। সবাই চায় পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে, নিজের পরিবারের দায়িত্ব নিতে। শিক্ষিত হয়ে বেকার থাকা আর শিক্ষা অর্জন না করে বেকার থাকার পার্থক্য অনেক। প্রতি বছর স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, কিন্তু সবার কি চাকরি হচ্ছে? জীবিকার তাগিদে যে যার পথ খুঁজছে। কেউ হতাশার অতল গহ্বরে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে চিরতরে।
একজন চাকরিপ্রার্থী একটা চাকরির আবেদন করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ব্যয় করে, তারপর নিজের জেলা শহর বা বিভাগীয় শহর থেকে রাজধানী ঢাকা শহরে পরীক্ষা দিতে যায়—তখন বাড়তি আরো অর্থ ব্যয় করতে হয়। একজন বেকারের জন্য দূরদূরান্তে চাকরির পরীক্ষা দিতে যাওয়ার চিন্তাই যেন বিলাসিতা। নিয়োগ পরীক্ষা দিলেই যে চাকরি হবে এমন নিশ্চয়তা নেই। একটা ছেলে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা দিতে গেলে প্লাটফর্মে ঘুমিয়েও রাত কাটিয়ে দিতে পারে, কিন্তু একটা মেয়ের ক্ষেত্রে এই সমাজব্যবস্থায় এটা কল্পনার বাইরে। দূরের পথে তাকে পরিবারের কাউকে সঙ্গে নিতে হয়। ছেলের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হয় একটা মেয়েকে।
কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ লিখেছেন, ‘বেকারের কোনো আকার নেই।’ জীবনে কষ্ট সইতে সইতে সবই তার সয়ে যায়। স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়ে কখনো হয়তো কষ্ট সহ্য করাটা অভ্যাসে পরিণত হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় কারো পরিবার রাজিই হচ্ছে না, কখনো অর্থ সংকট, দূরত্ব, পরিবেশ-পরিস্থিতি এসব ভেবে। কিন্তু কখনো প্রতিবন্ধকতা সব পেরিয়েও কেউ পরীক্ষা দিতে আসে শুধু একটা চাকরির জন্য। তবে আরো একটি দুঃখের বিষয় এই যে, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অহরহ শুনতে পাই প্রশ্ন ফাঁস আর জালিয়াতির ঘটনা। যারা দিনের পর দিন পরিশ্রম করে তিল তিল করে স্বপ্ন বোনে এই স্বপ্ন মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির কারণে। পরীক্ষাই বাতিল ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ।
দূরদূরান্তের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার উদ্দেশ্য রওনা দেয় অথবা কেউ পৌঁছে যায়। যারা এত চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পরীক্ষা দিতে এলো সেইসব প্রার্থীর কী হবে? তাদের যাতায়াতভাড়া তো কর্তৃপক্ষ বহন করেন না। কারো বয়স শেষের পথে তাদের যে সময় নষ্ট হলো তাদের কী উপায়? প্রার্থীদের যে অর্থদ্ল হলো এসব কীভাবে পুষিয়ে নেবে একজন চাকরিপ্রার্থী। এটা যেন তার জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন—চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত নোটিশ অন্তিম মুহূর্তে যেন না হয়। আর কখনো এমন ঘটলে অন্তত চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করা হয়।