শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘চতুর্থ ও পঞ্চম শিল্পবিপ্লব কিংবা আধুনিক বিশ্বে বাঁচতে হলে মুখস্থ নির্ভরতা নয়, আমাদের শিক্ষার্থীদের জেনে-বুঝে, অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মধ্য দিয়ে ক্রমাগতভাবে শিখতে হবে। আমাদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে।’
আজ শুক্রবার দুপুরে চাঁদপুর সার্কিট হাউসে নতুন শিক্ষাক্রমের সংস্কার ও বাতিলের দাবি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম একেবারে রূপান্তর। আপনারা-আমরা কিন্তু একটি মুখস্থ বিদ্যার জগৎ পার করে এসেছি। আমরা যখন পড়াশোনা করেছি, তখন একটি নতুন প্রযুক্তি এসেছে ১০-১৫ বছর বিরতিতে। এখন ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে। এখন আমাদের শিক্ষার্থীরা যে জগতে বড় হবে, সেখানে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করে তারপর নিজেদের নেতৃত্বের জায়গায় এনে টিকে থাকতে হবে। আমরা কি সারা জীবন পিছিয়ে থাকব? নিশ্চয়ই না।’
দিপু মনি বলেন, ‘এখন পৃথিবীতে মূল জিনিস হচ্ছে দক্ষতা। সে কারণে আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম রূপান্তর। এখন বিশ্বের অনেক দেশ এটি করেছে। বাকি দেশগুলো করার চেষ্টা করছে। আমরা একটি খুব ভালো জায়গায় নিজেদের নিয়ে আসতে পেরেছি এবং এটি হুট করে হয়নি। ২০১৭-১৮ সালে অনেকগুলো গবেষণার পর ২০১৯ সালে সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ আমরা এই অবস্থায় এসেছি এবং এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত।’
মন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ সময় নিয়ে অসংখ্য বিশেষজ্ঞের কাজের মধ্য দিয়ে আমরা এই জায়গাটিতে এসেছি এবং এটি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। সুতরাং এটি নিয়ে যারা আজ তথাকথিত আন্দোলন করছে, তাদের বেশির ভাগ কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যারা একেবারে স্কুল পর্যায় গিয়ে কমিশনে গাইড বই বিক্রি করেন, তাঁরা এসবের সঙ্গে জড়িত এবং দুঃখজনক হলেও সত্য, কোনো কোনো শিক্ষকও এর সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ যারা কোচিং করান, তাঁরা নোট-গাইডের ব্যবসায় জড়িত।’
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘তাঁরা যে দাবিগুলো করছেন, এটি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। তাঁরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল, সংস্কার কিংবা একটি ৫০ নম্বরের পরীক্ষা চান। তাহলে আমরা যদি বলি, ৫০ নম্বরের পরীক্ষা দেব, তাহলে সংস্কার আর বাতিলের প্রয়োজন হবে না। ৫০ নম্বরের পরীক্ষা কেন? তাহলে আবার বাচ্চাদের কোচিংয়ে যেতে হবে পরীক্ষার প্রস্তুতির নামে। কাজেই তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কোচিং ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখা। এ ছাড়া আমরা তাঁদের যেসব দাবি ও মিথ্যাচার—সবগুলোর জবাব দিয়েছি।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘তাঁরা অনেক অভিভাবককেও বিভ্রান্ত করছেন। এত বড় রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমরা একটি বছর পার করে এসেছি। এটি কোনো কম সময় নয়। আমাদের অভিভাবকেরা অভ্যস্ত হবেন, শিক্ষকেরা ক্রমাগত প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন এবং প্রশিক্ষণ চলবে। কাজেই আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং বাস্তবায়ন হবে। কারণ আমাদের বইগুলো পরীক্ষামূলক সংস্করণ। আমরা ক্রমাগত এর পরিমার্জন ও পরিশীলন করব। কিন্তু এই পদ্ধতির পরিবর্তন হবে না। বইগুলো আরও উন্নত করা হবে।’