• কলেজ
  • ভার্সিটির অধীনে সরকারি কলেজ : পেছনে ফিরে দেখা

ভার্সিটির অধীনে সরকারি কলেজ : পেছনে ফিরে দেখা

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। কোন কলেজ কোন ভার্সিটির অধিভুক্ত করা যায়, সেই কাজ শুরু হয়েছে। বিকেন্দ্রীকরণ করার লক্ষ্যে এটি করা হচ্ছে- সম্প্রতি (৩১ মে. ২০২২) একটি অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক এমন তথ্যই জানিয়েছিলেন।  

২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সরকারি কলেজগুলোকে সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার নির্দেশনা দেন তিনি। এই নির্দেশনার পর একই বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে সভা হয়। সভায় উপাচার্যরা কলেজগুলোকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে সম্মত হন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয় এমন সরকারি কলেজগুলোকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এরই অংশ হিসাবে রাজধানীর সরকারি ৭টি কলেজ নেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। যদিও এ বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন  জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নানা চেষ্টা করেছিলেন যাতে এই ৭টি কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থেকে চলে না যায়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি দ্রুত এই ৭ কলেজ নিয়ে নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।

নতুন করে অন্যান্য সরকারি কলেজগুলো ওেই এলাকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনেক আগে স্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল, সেখানে খুব ভালো চলছিল না বলেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল। এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা রিঅরগানাইজেশন হচ্ছে। যা দিয়ে আমরা কলেজের শিক্ষার মান উন্নত করতে পারব। যেভাবে আমাদের জনবল, জনশক্তি তৈরি করা দরকার- আমরা সেই পদ্ধতিতে যাচ্ছি। নতুন যে পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় হয়েছে, সে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্ষমতা এখন পর্যন্ত খুবই কম। এই জন্য এ বিষয়টি আমরা এখনই চূড়ান্ত করতে পারছি না। এটি নিয়ে আরও অনেক চিন্তাভাবনা করতে হবে। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

 

বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশে কলেজ আছে প্রায় তিন হাজার। এর মধ্যে ৮৮১টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এত শিক্ষার্থীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাজধানীর সাতটি বড় সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।

 

শুরুতে এসব কলেজে সময়মতো পরীক্ষার ফল প্রকাশসহ শিক্ষা কার্যক্রমে বেশকিছু সমস্যা হয়। এ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছিল। তবে এখন এই কলেজগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমেও কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় দেশের অন্য সরকারি কলেজগুলোকেও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

একসময় স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয় এমন কলেজগুলো কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এটি মূলত একটি অ্যাফিলিয়েট বিশ্ববিদ্যালয়। তখন কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। কিন্তু যে উদ্দেশ্য নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠানটি ঠিকমতো পূরণ করতে পারেনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মান নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কাঠামো ভেঙে দিতে বলেন। যদিও সেটি পরে আর বাস্তবায়ন হয়নি।