এবার এইচএসসিতে এত কম পাসের কারণ কী ?

২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার (৫৮.৮৩%) উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে শিক্ষা বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে উঠে এসেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার এই ফলাফলকে "বাস্তবভিত্তিক" এবং "স্বাভাবিক" বলে উল্লেখ করেছেন এবং এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে শিক্ষাব্যবস্থার দীর্ঘদিনের সমস্যা ও মূল্যায়নে কঠোরতা তুলে ধরেছেন।

পাসের হার কমার প্রধান কারণগুলো হলো:

১. শিক্ষার প্রকৃত ঘাটতি (Learning Crisis):

  • শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশে শেখার সংকট শুরু হয় প্রাথমিক স্তর থেকেই এবং সেই ঘাটতি বছর বছর সঞ্চিত হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এসে বড় আকারে ধরা পড়েছে।

  • দীর্ঘদিন ধরে শুধু 'ভালো' ফলাফল দেখানোর জন্য পাসের হার ও জিপিএ-৫-কে সাফল্যের মানদণ্ড হিসেবে ধরার প্রবণতা ছিল, যা শেখার প্রকৃত ঘাটতিকে আড়াল করে রেখেছিল।
     

    বছর

    পাসের হার (%)

    ২০১৫

    ৭৪.৭৭

    ২০১৬

    ৭৮.০৫

    ২০১৭

    ৭৮.৭৭

    ২০১৮

    ৭৬.৭৪

    ২০১৯

    ৭৩.৯৭

    ২০২০

    ১০০ (অটোপাস)

    ২০২১

    ৯৫.২৬

    ২০২২

    ৮৫.৯৫

    ২০২৩

    ৭৮.৬৪

    ২০২৪

    ৭৭.৭৮

    ২০২৫

    ৫৮.৮৩

২. মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন ও কঠোরতা:

  • শিক্ষা উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এবারের মূল্যায়নে "অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি" নয়, বরং "ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততা"-কে বেছে নেওয়া হয়েছে।

  • তিনি সকল শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছিলেন— যেন ফলাফলের বাস্তবতা বিকৃত না হয় এবং সীমান্তরেখায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি ন্যায্যতা বজায় রেখে কঠোরভাবে খাতা দেখা হয়।

  • এর অর্থ হলো, আগে যে "গ্রেস মার্কস" বা কিছুটা উদারভাবে নম্বর দেওয়ার প্রবণতা ছিল, এবার তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব ফলাফলে পড়েছে।

৩. বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা:

  • ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবিরের মতে, শিক্ষার্থীরা ইংরেজি, গণিত এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) বিষয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা দেখিয়েছে, যা সামগ্রিক পাসের হার কমিয়ে দিয়েছে।

৪. কোভিড-পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা:

  • এটিই প্রথম পরীক্ষা, যা কোভিড-১৯ মহামারীর পরে পূর্ণ নম্বর, পূর্ণ সময় এবং পূর্ণ সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে (বিশেষ করে ২০২০, ২০২১ ও ২০২২) পরীক্ষা বাতিল, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও বিষয় ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশিত হওয়ায় পাসের হার অস্বাভাবিকভাবে বেশি ছিল। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ফেরায় পাসের হার কমেছে।

শিক্ষা উপদেষ্টা এই ফলাফলকে "ব্যর্থতা নয়, বরং আত্মসমালোচনার সুযোগ" হিসেবে দেখছেন এবং ভবিষ্যতে শিক্ষার মান ও ন্যায্য মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন শুরুর তারিখ জানা গেল

অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। যা চলবে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত। ২০২৪ সালে সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং ২০২৩ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা শিক্ষার্থীরাই এবার রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাবে।

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।

বোর্ডের তথ্যমতে, নীতিমালা অনুযায়ী পরীক্ষা বছরের ১ জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীর বয়স সর্বনিম্ন ১১+ এবং সর্বোচ্চ ১৭ বছর হতে হবে। তবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২২ বছর নির্ধারিত। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী শুধু অনুমোদিত ও স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। অনুমতিবিহীন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিকটবর্তী অনুমোদিত স্কুল বা কলেজের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে ওইএমএন বা ইএসআইএফ বাটনে ক্লিক করে ইআইআইএন ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হবে। এরপর শিক্ষার্থীর সংখ্যা, নাম ও মোবাইল নম্বর দিয়ে সোনালি সেবার স্লিপ প্রিন্ট করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যাংকে জমা দিতে হবে। পেমেন্ট ক্লিয়ার হলে শিক্ষার্থীর তথ্য ইএসআইএফ পূরণ করে ফাইনাল সাবমিট করতে হবে। ফাইনাল সাবমিটের আগে ভর্তি ফরম ও জন্মসনদের সঙ্গে তথ্য মিলিয়ে যাচাই করতে হবে।

আর রেজিস্ট্রেশন ফি হিসেবে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য ২৫০ টাকা এবং যুব রেডক্রিসেন্ট ফি হিসেবে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ টাকা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব যুব রেডক্রিসেন্ট কার্যক্রমের জন্য রাখবে এবং ২৪ টাকা শিক্ষা বোর্ডে জমা দিতে হবে।
 

বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের সমন্বয়ে তিন সদস্যের রেজিস্ট্রেশন কমিটি গঠন করতে হবে। অনলাইন রেজিস্ট্রেশন শেষে প্রিন্ট কপি সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক। শিক্ষার্থীর তথ্যে কোনো ভুল থাকলে তার দায়ভার প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কমিটির সদস্যদের ওপর বর্তাবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে, তারা ব্যানবেইস থেকে ইআইআইএন সংগ্রহের পর সোনালী ব্যাংকে ১ হাজার ৫০০ টাকা জমা দিয়ে লগইন পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবে। স্বীকৃতি হালনাগাদ না থাকলে দ্রুত স্বীকৃতি নবায়নের আবেদন করতেও বলা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

'এখন ১০ শতাংশ নয়, শিক্ষকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান'

পরের বাজেটে বাড়তে পারে শিক্ষকদের বরাদ্দ: শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। ছবি- সংগৃহীত
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। ছবি- সংগৃহীত

বিশেষ প্রতিনিধি

শিক্ষক নেতাদের সময়মতো দাবি ও হিসাব-নিকাশ পেশ না করার কারণে চলতি বাজেটে বেশি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার। তিনি শিক্ষক নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, "এখন ১০ শতাংশ নয়, পরের বাজেটে বাড়ানো যেতে পারে।"

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সচিবালয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সময়মতো প্রস্তাব না দেওয়ায় বরাদ্দ কম

অধ্যাপক আবরার বলেন, শিক্ষক নেতারা যদি প্রাথমিক হিসাবটা আগেভাগে মন্ত্রণালয়ে দিতেন, তবে বাজেট ঘোষণার আগেই তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে যৌক্তিক প্রস্তাব হিসেবে পাঠানো যেত। তিনি স্বীকার করেন, শিক্ষকদের দাবির যৌক্তিকতা অনস্বীকার্য এবং সময়মতো প্রস্তাব গেলে এখনকার চেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়া সম্ভব হতো।

তবে, বর্তমানে যেখানে অর্থের সংস্থান নেই, সেখানে এর বেশি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি শিক্ষক নেতাদের জানিয়েছেন।

 

পরের বাজেটে বৃদ্ধির আশ্বাস

শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, সরকার আগামী বছরের বাজেটে কিছু শতাংশ বৃদ্ধি করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাবে। তিনি শিক্ষক নেতাদের ধৈর্য ধরার এবং আন্দোলনের পথে না গিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "আমরা এই দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করছি, কিন্তু তাদেরও ধৈর্য ধরতে হবে।"

 

শিক্ষক নেতারা রাজি নন

অধ্যাপক আবরার জানান, শিক্ষক নেতারা সরকারের এই প্রস্তাবে রাজি হননি। তারা এখনই ১০ শতাংশ এবং সামনের বছর আরও ১০ শতাংশ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। তবে, এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারের বাইরে হওয়ায় তারা তাতে রাজি হননি।

তিনি বলেন, "সংস্থান থাকলে আমরা এখনই দিতাম। কিন্তু বাস্তবতায় অর্থের সীমাবদ্ধতা আছে।" শিক্ষার্থীদের ক্ষতি এড়াতে আন্দোলন প্রত্যাহার করার অনুরোধও করেন তিনি।

 

পে-কমিশনের ইঙ্গিত

অধ্যাপক আবরার নতুন পে-কমিশনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সরকার ইতিমধ্যে পে কমিশন গঠন করেছে, যার প্রতিবেদন আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে আসতে পারে। তিনি ইঙ্গিত দেন, পে কমিশনের রিপোর্টে ৫০, ৭০ বা এমনকি ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে।

 

ভবিষ্যতের জন্য 'থোক বরাদ্দ' থেকে মুক্তি

শিক্ষা উপদেষ্টা আরও ব্যাখ্যা দেন যে, তারা বর্তমানে 'থোক বরাদ্দ' থেকে শতকরা হারে ভাতা নির্ধারণের পদ্ধতিতে যাচ্ছেন, যা একটি বড় অগ্রগতি। কারণ ভবিষ্যতে মূল বেতন বাড়লে সেই অনুপাতে বাড়ি ভাড়াও বাড়বে।

তিনি শিক্ষক নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তারা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ভবিষ্যৎ সরকার 'থোক বরাদ্দ' পদ্ধতিতেই থেকে যেতে পারে, যা শিক্ষকদের জন্য লাভজনক হবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং প্রয়োজনীয় সব কাজ করেছে, কিন্তু বর্তমানে সময় ও অর্থ দুটোই সীমিত। তিনি শিক্ষক নেতাদের এই সুযোগ না হারানোর আহ্বান জানান।

মন্তব্য করুন

শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশ: দিনটি ‘ঐতিহাসিক’ - উপদেষ্টা

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। ছবি- সংগৃহীত
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। ছবি- সংগৃহীত

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশে উন্নীত করার দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার। একই সঙ্গে তিনি নিজেকে ‘সৌভাগ্যবান’ বলেও মনে করেছেন।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশ করার বিষয়ে সম্মতিপত্র জারি করে। এরপর এক বিবৃতিতে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “আজকের এই দিনটি শিক্ষা বিভাগের জন্য সত্যিই ঐতিহাসিক। চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে ৭.৫ শতাংশ (ন্যূনতম ২ হাজার টাকা) হারে বাড়িভাড়া কার্যকর হবে, আর ২০২৬ সালের জুলাই থেকে আরও ৭.৫ শতাংশ যুক্ত হয়ে মোট ১৫ শতাংশ ভাতা চালু হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সম্মানিত শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করতে পেরে একজন শিক্ষক হিসেবে এবং শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।”

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা খালিদ মাহমুদের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষা উপদেষ্টা বিশ্বাস করেন—শিক্ষকরা সমাজে আরও বেশি সম্মানের দাবিদার, এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্রকে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।

সি আর আবরার বলেন, “বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশে উন্নীত করার পথটা সহজ ছিল না। নানা মতভেদ, বিতর্ক ও অভিযোগ ছিল। কিন্তু কোনো বিতর্কে জড়ানো ছাড়া আমরা ন্যায্য ও টেকসই সমাধানের লক্ষ্যেই কাজ করে গেছি।”

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, নেপথ্যে থেকে শিক্ষা উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, উপদেষ্টা পরিষদ এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করেছেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “এটি কারও একার অর্জন নয়; এটি যৌথ সাফল্য। শিক্ষকদের আন্দোলন আমাদের বাস্তবতা বুঝিয়েছে, সরকার দায়িত্বশীলভাবে সাড়া দিয়েছে, আর একসঙ্গে কাজ করার ফলেই আমরা আজ এই অবস্থানে পৌঁছেছি—যেখানে সম্মান, সংলাপ ও সমঝোতাই জয়ী হয়েছে।”

শেষে তিনি বলেন, “এখন সময় ক্লাসে ফেরা, শিক্ষার্থীদের কাছে যাওয়া—আমাদের আসল কাজের জায়গায় ফিরে যাওয়ার। আজকের এই সমঝোতা হোক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া ও মানসম্মত শিক্ষার নতুন সূচনা। আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে আরও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিতে পারব।”

মন্তব্য করুন

শিক্ষাপঞ্জিতে ভিন্নতা—পূজার ছুটিতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজে টানা বারো দিন, মাদরাসা-কারিগরিতে মাত্র চার দিন

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকাশিত বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দুর্গাপূজা উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে ছুটির দিনগুলোতে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পূজার আমেজ শুরু হচ্ছে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকেই। কারণ ওই দুই দিন (২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর) সাপ্তাহিক বন্ধের পর ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে পূজার ছুটি কার্যকর হবে। একটানা ছুটি কাটিয়ে ৭ অক্টোবরের পর আবার নতুন উদ্যমে শুরু হবে ক্লাস।

একইভাবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতেও ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত টানা বারো দিনের ছুটি মিলবে। ৮ অক্টোবর থেকে আবার গরমিল ছাড়া ক্লাস চলবে যথারীতি।

অন্যদিকে, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা ভিন্ন। শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্গাপূজার জন্য ছুটি থাকবে মাত্র দুই দিন—১ ও ২ অক্টোবর। তবে এর সঙ্গে যোগ হবে ৩ ও ৪ অক্টোবরের সাপ্তাহিক বন্ধ। ফলে মোট ছুটি দাঁড়াবে চার দিনে। ৫ অক্টোবর থেকে পুরোদমে আবার চলবে পাঠদান।

👉 প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছুটি দীর্ঘায়িত হলেও মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তুলনামূলকভাবে সীমিত এই ছুটির মেয়াদ শিক্ষার্থীদের পাঠচর্চার ধারাবাহিকতায় রাখবে এক ধাপ এগিয়ে।

মন্তব্য করুন

আবেদন নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকে চিকিৎসা ব্যয়, সন্তানদের লেখাপড়া, বিয়ে বা হজ-ওমরাহর খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

অবসরভাতা না পেয়ে অনিশ্চয়তায় ৮৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী

অবসরে যাওয়া শিক্ষক
অবসরে যাওয়া শিক্ষক

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮৮ হাজার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী চার বছর ধরে অবসর ও কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। নিয়মিত চাঁদা দেওয়া সত্ত্বেও অবসরের পর তারা প্রাপ্য অর্থ পাচ্ছেন না। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী অবসরের ছয় মাসের মধ্যে ভাতা পরিশোধ করার কথা থাকলেও পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট জানিয়েছে, জমে থাকা আবেদন নিষ্পত্তিতে এখনই প্রয়োজন প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সম্প্রতি সরকার দিয়েছে মাত্র ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা—যার মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা বন্ড আকারে অবসর সুবিধা বোর্ডে এবং ২০০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে কল্যাণ ট্রাস্টে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই টাকায় পরিস্থিতি সাময়িকভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব হলেও সংকট নিরসন হবে না। বর্তমানে একটি আবেদন নিষ্পন্ন হতে গড়ে আড়াই বছর সময় লেগে যাচ্ছে।

এদিকে, আবেদন নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকে চিকিৎসা ব্যয়, সন্তানদের লেখাপড়া, বিয়ে বা হজ-ওমরাহর খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ ধারদেনা করে চলছেন, আবার অনেকে টাকা না পেয়ে মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীরা প্রাপ্য পাওয়ার জন্য ছুটছেন।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন না হলে শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব ও সমাজে তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে। তরুণ প্রজন্মও শিক্ষা পেশায় আগ্রহ হারাতে পারে। তাদের মতে, শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অন্যান্য খাতে অতিরিক্ত ব্যয় করাতেই এই সংকট তৈরি হয়েছে।

অবসর সুবিধা বোর্ডের হিসাবে, বর্তমানে ৪৫ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন, যার জন্য প্রয়োজন ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে, কল্যাণ ট্রাস্টে ৪২ হাজার ৬০০ আবেদন জমে আছে, যা নিষ্পত্তি করতে লাগবে প্রায় ৩ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। অথচ বোর্ডের মাসিক চাহিদা ৬৫ কোটি টাকা হলেও জমা হয় মাত্র ৫৫ কোটি টাকা, ফলে প্রতিবছর প্রায় ১২০ কোটি টাকার ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।

চাকরিকালে কাটা টাকা

অবসর সুবিধার জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের ৬% এবং কল্যাণ সুবিধার জন্য ৪% টাকা কেটে রাখা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকেও বছরে ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে—এর মধ্যে ৭০ টাকা অবসরের জন্য ও ৩০ টাকা কল্যাণের জন্য। অর্থাৎ, চাকরিকালে নিজেদের জমানো টাকা ফেরত পেতে এখন বছরের পর বছর ধরনা দিতে হচ্ছে শিক্ষকদের।

সমাধানের দাবি

অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তারা বলছেন, সংকট সমাধানে প্রয়োজন এককালীন বিশেষ বরাদ্দ। নাহলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দুর্ভোগ দীর্ঘদিন চলতেই থাকবে।


 

মন্তব্য করুন

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের ১২ কোটিরও বেশি নতুন পাঠ্যপুস্তক ছাপানো হবে

এনসিটিবি-NCTB
এনসিটিবি-NCTB

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি), দাখিল এবং কারিগরি শাখার ১২ কোটি ৫৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৭১টি নতুন পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই বিশাল সংখ্যক বইয়ের জন্য মোট ৪৪৪ কোটি ৮০ লাখ ৮৭ হাজার ৬৬১ টাকা ব্যয় হবে।

বুধবার (২২ অক্টোবর) সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটির সভাপতি, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

তিন ধাপে অনুমোদিত বই ও ব্যয়:

১. ষষ্ঠ শ্রেণির বই:

  • মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), দাখিল ও কারিগরির ষষ্ঠ শ্রেণির মোট ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৮১ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।

  • এতে মোট ব্যয় হবে ১৩৭ কোটি ৮৭ লাখ ১৯ হাজার ৯৫০ টাকা

  • প্রতিটি পাঠ্যপুস্তকের জন্য গড় ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ টাকা ৫৮ পয়সা

২. অষ্টম শ্রেণির বই:

  • মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), দাখিল ও কারিগরির অষ্টম শ্রেণির মোট ৪ কোটি ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৮ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।

  • এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ১২ হাজার ৯৭ টাকা

  • প্রতিটি পাঠ্যপুস্তকের জন্য গড় ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ টাকা

৩. সপ্তম শ্রেণির বই:

  • মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), দাখিল ও কারিগরির সপ্তম শ্রেণির মোট ৪ কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯২ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।

  • এই বইগুলোর জন্য ব্যয় হবে ১৫০ কোটি ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৪ টাকা

  • প্রতিটি পাঠ্যপুস্তকের জন্য গড় ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ টাকা ৭ পয়সা

ক্রয় প্রক্রিয়া:

জানা গেছে, তিনটি শ্রেণির জন্যই আলাদাভাবে উন্মুক্ত পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে কারিগরি কমিটি (টিইসি)-এর সুপারিশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বইগুলো ক্রয় করার প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দেয়।

মন্তব্য করুন
×