এবার এইচএসসিতে এত কম পাসের কারণ কী ?
২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার (৫৮.৮৩%) উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে শিক্ষা বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে উঠে এসেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার এই ফলাফলকে "বাস্তবভিত্তিক" এবং "স্বাভাবিক" বলে উল্লেখ করেছেন এবং এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে শিক্ষাব্যবস্থার দীর্ঘদিনের সমস্যা ও মূল্যায়নে কঠোরতা তুলে ধরেছেন।
পাসের হার কমার প্রধান কারণগুলো হলো:
১. শিক্ষার প্রকৃত ঘাটতি (Learning Crisis):
-
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশে শেখার সংকট শুরু হয় প্রাথমিক স্তর থেকেই এবং সেই ঘাটতি বছর বছর সঞ্চিত হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এসে বড় আকারে ধরা পড়েছে।
-
দীর্ঘদিন ধরে শুধু 'ভালো' ফলাফল দেখানোর জন্য পাসের হার ও জিপিএ-৫-কে সাফল্যের মানদণ্ড হিসেবে ধরার প্রবণতা ছিল, যা শেখার প্রকৃত ঘাটতিকে আড়াল করে রেখেছিল।
বছর
পাসের হার (%)
২০১৫
৭৪.৭৭
২০১৬
৭৮.০৫
২০১৭
৭৮.৭৭
২০১৮
৭৬.৭৪
২০১৯
৭৩.৯৭
২০২০
১০০ (অটোপাস)
২০২১
৯৫.২৬
২০২২
৮৫.৯৫
২০২৩
৭৮.৬৪
২০২৪
৭৭.৭৮
২০২৫
৫৮.৮৩
২. মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন ও কঠোরতা:
-
শিক্ষা উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এবারের মূল্যায়নে "অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি" নয়, বরং "ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততা"-কে বেছে নেওয়া হয়েছে।
-
তিনি সকল শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছিলেন— যেন ফলাফলের বাস্তবতা বিকৃত না হয় এবং সীমান্তরেখায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি ন্যায্যতা বজায় রেখে কঠোরভাবে খাতা দেখা হয়।
-
এর অর্থ হলো, আগে যে "গ্রেস মার্কস" বা কিছুটা উদারভাবে নম্বর দেওয়ার প্রবণতা ছিল, এবার তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব ফলাফলে পড়েছে।
৩. বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা:
-
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবিরের মতে, শিক্ষার্থীরা ইংরেজি, গণিত এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) বিষয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা দেখিয়েছে, যা সামগ্রিক পাসের হার কমিয়ে দিয়েছে।
৪. কোভিড-পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা:
-
এটিই প্রথম পরীক্ষা, যা কোভিড-১৯ মহামারীর পরে পূর্ণ নম্বর, পূর্ণ সময় এবং পূর্ণ সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে (বিশেষ করে ২০২০, ২০২১ ও ২০২২) পরীক্ষা বাতিল, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও বিষয় ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশিত হওয়ায় পাসের হার অস্বাভাবিকভাবে বেশি ছিল। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ফেরায় পাসের হার কমেছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা এই ফলাফলকে "ব্যর্থতা নয়, বরং আত্মসমালোচনার সুযোগ" হিসেবে দেখছেন এবং ভবিষ্যতে শিক্ষার মান ও ন্যায্য মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।