ঢাকার সাত কলেজকে নিয়ে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র নামে স্নাতক পর্যায়ের ভর্তি ও ক্লাস শুরুর যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, সেটিকে আইনসিদ্ধ নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোর শিক্ষকরা। এই বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তির কারণে তৈরি হওয়া জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁরা আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান পরীক্ষাসমূহ কর্মসূচির বাইরে থাকবে। আজ সোমবার ঢাকা কলেজ মিলনায়তনে সাত কলেজের শিক্ষকদের এক জরুরি সভায় এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (যার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলমান) বা সমমানের প্রতিষ্ঠানের অন্তর্বর্তী প্রশাসক ১৬ নভেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। এতে বলা হয়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি শিক্ষার্থীদের নিশ্চায়ন প্রক্রিয়া ১৭–২০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে এবং ২৩ নভেম্বরের মধ্যে ক্লাস শুরু করতে হবে। কিন্তু আজকের সভায় শিক্ষকরা বলেন, এখনো প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ চূড়ান্ত না হওয়ায় এমন বিজ্ঞপ্তি আইনি জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাঁরা আরও জানান, তাঁরা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে বিধিবদ্ধভাবে সরকারি কলেজে দায়িত্ব পালন করছেন; তাই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিশ্চায়ন বা ক্লাস শুরুর কাজে তাঁদের যুক্ত হওয়ার অবকাশ নেই। সাত কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো বজায় রেখে দ্রুততম সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জোর দাবি জানানো হয়। ঢাকার সাত কলেজকে কেন্দ্র করে বহুদিন ধরেই সংকট চলছে। ২০১৭ সালে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া এসব কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হলে সমস্যার সূচনা হয়। সাত কলেজ—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজে—তৎকালীন সিদ্ধান্তের পরই একের পর এক জটিলতা দেখা দেয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাত কলেজকে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই অধিভুক্তি বাতিল করায় সংকট আরও ঘনীভূত হয়। বর্তমানে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় সাত কলেজের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকার যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে, তার কাঠামো নিয়ে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে আগে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালনের পর এখন তাঁরা তিন দিনের কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন। সাত কলেজের মধ্যে বর্তমানে ইডেন ও তিতুমীর কলেজে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠদান হয়; অন্য পাঁচটি কলেজে স্নাতক–স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকও চালু রয়েছে।
বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে শুধু সরকারি কর্মকর্তা (নবম গ্রেডের নিচে নয়) বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (পঞ্চম গ্রেডের নিচে নয়) মনোনয়ন দেওয়ার বিধান সংবলিত প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালত রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন যে, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে কেবল সরকারি কর্মকর্তা বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মনোনয়নের এই বিধান কেন অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না। আদেশের দিন ও বেঞ্চ বুধবার (২২ অক্টোবর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। রিটের কারণ ও আইনজীবীর বক্তব্য বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি পদে কেবল সরকারি কর্মকর্তাদের মনোনয়নের এই বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট মোকছেদুর রহমান আবির রিটটি দায়ের করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, বেসরকারি স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের মনোনয়নের বিধান বৈষম্যমূলক। এই যুক্তিতেই আদালত প্রজ্ঞাপনটির কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন। প্রজ্ঞাপনের মূল বিষয়বস্তু গত সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া অন্য কেউ হতে পারবেন না। এই পদে নবম গ্রেড বা তার ওপরের পদে কর্মরত কিংবা পঞ্চম গ্রেড বা তার ওপরের পদে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এছাড়া, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভাপতির প্রার্থীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা সমমান হতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সভাপতি হতে পারবেন। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক খন্দোকার এহসানুল কবির জানান, বিদ্যমান নিয়মে সামান্য সংশোধন এনে শুধু সভাপতি পদটির জন্য এই পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নীতিমালায় নতুন দাবি যুক্তকরণ এবং আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের সম্পূরক বৃত্তি নিশ্চিত করার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) জবি ছাত্রদলের একটি প্রতিনিধিদল ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দীন খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ স্মারকলিপি জমা দেয়। ইউজিসি চেয়ারম্যান এর পক্ষে ড.তানজীমউদ্দীন খান এই স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। স্মারকলিপি প্রদান শেষে জবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, জবি ছাত্রদল সবসময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা নানামুখী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। তাই ছাত্রদলের দাবি আগামী অক্টোবরের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের সম্পূরক বৃত্তি দেওয়া হোক। এ লক্ষ্যে আমরা আজ ইউজিসি চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। পাশাপাশি, জকসু নীতিমালায় কিছু প্রয়োজনীয় পদ যুক্তকরণের যৌক্তিক দাবিও জানিয়েছি। শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে যা কিছু দরকার, ছাত্রদল তা করে যাচ্ছে। অক্টোবরের মধ্যে সম্পূরক বৃত্তি নিশ্চিত করতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। এটা জবিয়ানদের ন্যায্য অধিকার। স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর আহমেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন সর্দার, মোস্তাফিজুর রহমান রুমি প্রমুখ। জকসু নীতিমালায় শাখা ছাত্রদলের প্রস্তাবিত নতুন সম্পাদকীয় পদগুলো হলো : স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী সম্পাদক, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক, দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক। এছাড়া জবি ছাত্রদল কোষাধ্যক্ষ পদের বিপরীতে অর্থ সম্পাদক পদকে পুনরাবৃত্তি উল্লেখ করে তা বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছে।
ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ ঘিরে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। এসব কলেজ একীভূত করে সরকার যে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় করতে যাচ্ছে, তার কাঠামো নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করেছে। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। সাতটি কলেজ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠকেন্দ্র (একাডেমিক ক্যাম্পাস)। একেক ক্যাম্পাসে আলাদা আলাদা বিষয়ে (ডিসিপ্লিন) পড়ানো হবে। শিক্ষকেরা বলছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে না। তাঁরা মনে করেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে কলেজগুলোর উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষার সংকোচন এবং কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো ও ঐতিহ্য বিলুপ্ত হবে। এমনকি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পদও বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়বে। প্রস্তাবিত কাঠামোর বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে গতকাল একযোগে নিজ নিজ কলেজে মানববন্ধন করেছেন সাত কলেজের শিক্ষকেরা। শিক্ষকেরা বলছেন, সাত কলেজের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় হোক, সেটির বিপক্ষে তাঁরাও নন। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অবশ্যই পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শিক্ষকেরা বলছেন, সাত কলেজের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় হোক, সেটির বিপক্ষে তাঁরাও নন। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অবশ্যই পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ ইডেন মহিলা কলেজ বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ কবি নজরুল কলেজ বাঙলা কলেজ তিতুমীর কলেজ এই সাত কলেজে বর্তমানে দেড় লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। আর শিক্ষক রয়েছেন হাজারের বেশি। এসব কলেজের মধ্যে বর্তমানে ইডেন ও তিতুমীরে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। বাকি পাঁচটি কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকও পড়ানো হয়। এসব কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চমাধ্যমিক স্তর অস্তিত্বসংকটে পড়বে। ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা গতকাল কলেজের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, প্রস্তাবিত কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আগে থেকে আন্দোলন করে আসছেন কলেজগুলোর স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থী। কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চমাধ্যমিক স্তর অস্তিত্বসংকটে পড়বে। জানতে চাইলে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করে দেওয়ার জন্য গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দায়িত্ব ছিল স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করে দেওয়া। তাঁরা কাজটি করে দিয়েছেন। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে সাত কর্মদিবসের মধ্যে মতামত দেওয়া যাবে। এরপর অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এখনকার মতো কাঠামো অনুযায়ী কলেজগুলো আগামী কয়েক বছর চলবে। ২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই সাত কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তখন থেকেই সংকট ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত করার আগেই অধিভুক্তি বাতিল করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এখন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় সাত কলেজের কার্যক্রম চলছে। যেভাবে চলবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চারটি ভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। এর মধ্যে স্কুল অব সায়েন্সের আওতায় ঢাকা কলেজে ফলিত গণিত, প্রাণিবিদ্যা, ডেটা সায়েন্স, প্রাণরসায়ন ও জৈবপ্রযুক্তি; ইডেন কলেজে পদার্থবিদ্যা, ফলিত রসায়ন, উদ্ভিদবিদ্যা, ফরেনসিক সায়েন্স এবং বদরুন্নেসা কলেজে মনোবিজ্ঞান এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিষয় চালু করা যাবে। স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিসের আওতায় বাঙলা কলেজে যেসব বিষয় চালু করা যাবে, তার মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকতা ও যোগাযোগ অধ্যয়ন, উন্নয়ন অধ্যয়ন, অর্থনীতি, চলচ্চিত্র অধ্যয়ন এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি। ২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই সাত কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তখন থেকেই সংকট ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। স্কুল অব বিজনেসের আওতায় তিতুমীর কলেজে থাকবে হিসাববিজ্ঞান, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, হোটেল অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস, ব্যাংক অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স ম্যানেজমেন্ট এবং স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিসের আওতায় কবি নজরুল কলেজে আইন এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজে অপরাধবিজ্ঞান বিষয় চালু করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ‘হাইব্রিড’পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে, বাকিগুলো সশরীর। পরীক্ষা হবে সশরীর। বিশ্ববিদ্যালয় চলবে বেলা একটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা প্রথম চার সেমিস্টার সাধারণ বিষয়, পরের চারটি ডিসিপ্লিনভিত্তিক। চারটি সেমিস্টার শেষ করার পর শর্ত পূরণ সাপেক্ষে শুধু নিজ ক্যাম্পাসে ডিসিপ্লিন পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। এই সাতটি কলেজের অবকাঠামো ও ক্যাম্পাস স্থায়ীভাবে দিনের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (বেলা একটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত) ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। যেসব কলেজে এখন উচ্চমাধ্যমিক স্তর আছে, সেগুলো অক্ষুণ্ন থাকবে। অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী, সার্চ কমিটির মাধ্যমে উপাচার্য ও সহ–উপাচার্য নিয়োগ হবে। প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক, সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ও ইমেরিটাস অধ্যাপকের পদসহ গবেষক ও কর্মচারীর যেকোনো পদ সৃষ্টি করা যাবে। তবে বিদ্যমান শিক্ষকদের বিষয়ে অধ্যাদেশে পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার মতো যোগ্য হবেন, তাঁরা থাকতে পারবেন। যদিও শিক্ষকেরা আশঙ্কা করে বলেছেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় করার সময় যে অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছিল, এখনো তা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকাশিত বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দুর্গাপূজা উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে ছুটির দিনগুলোতে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পূজার আমেজ শুরু হচ্ছে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকেই। কারণ ওই দুই দিন (২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর) সাপ্তাহিক বন্ধের পর ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে পূজার ছুটি কার্যকর হবে। একটানা ছুটি কাটিয়ে ৭ অক্টোবরের পর আবার নতুন উদ্যমে শুরু হবে ক্লাস। একইভাবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতেও ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত টানা বারো দিনের ছুটি মিলবে। ৮ অক্টোবর থেকে আবার গরমিল ছাড়া ক্লাস চলবে যথারীতি। অন্যদিকে, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা ভিন্ন। শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্গাপূজার জন্য ছুটি থাকবে মাত্র দুই দিন—১ ও ২ অক্টোবর। তবে এর সঙ্গে যোগ হবে ৩ ও ৪ অক্টোবরের সাপ্তাহিক বন্ধ। ফলে মোট ছুটি দাঁড়াবে চার দিনে। ৫ অক্টোবর থেকে পুরোদমে আবার চলবে পাঠদান। 👉 প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছুটি দীর্ঘায়িত হলেও মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তুলনামূলকভাবে সীমিত এই ছুটির মেয়াদ শিক্ষার্থীদের পাঠচর্চার ধারাবাহিকতায় রাখবে এক ধাপ এগিয়ে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর) চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠন এবং ১ ডিসেম্বর থেকে সব অ্যাডহক কমিটি বিলুপ্ত করার যে পরিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয় জারি করেছিল, তার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ থেকে গত ৮ সেপ্টেম্বর পরিপত্রটি জারি করা হয়। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন। আইনজীবীদের তথ্যমতে, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা–২০২৪ এ চলতি বছরের ২৮ ও ৩১ আগস্ট সংশোধনী আনে ঢাকাসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড। সংশোধনের মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোনয়নসংক্রান্ত ১৩(১) বিধি এবং যোগ্যতাসংক্রান্ত ৬৪(৩) বিধি পরিবর্তন করা হয়। এই দুই বিধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এমরান হোসেনসহ চারটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি গত রোববার রিট আবেদন করেন। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফখরুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মুজাহিদুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী। পরে আইনজীবী ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, দেশের নয়টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রায় ২০ হাজারের বেশি বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই বোর্ডগুলো ম্যানেজিং কমিটি পরিচালনাসংক্রান্ত প্রবিধানমালায় সংশোধন আনে, যেখানে বলা হয়েছে— সরকারি, আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নবম গ্রেডের নিচে নন এমন কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত হলে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে পারবেন। অর্থাৎ বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শুধুমাত্র সরকারি বা আধা সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ হতে পারবেন না। আগে যেখানে সভাপতি নির্বাচনের মাধ্যমে হতেন, সেখানে এখন এই যোগ্যতাসীমা আরোপ করা হয়েছে— যা আবেদনকারীদের মতে বৈষম্যমূলক। রিটে আদালতের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, সংশোধিত ১৩(১) এবং ৬৪(৩) বিধি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না। হাইকোর্ট রুল জারি করে ৮ সেপ্টেম্বরের পরিপত্রের কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। ফলে বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাডহক কমিটি আপাতত কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্ব খাতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা-২০২৩ এর ৩য় গ্রুপের ( ০৩ টি পার্বত্য জেলা ব্যতীত ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২১ টি জেলা) লিখিত পরীক্ষার ফলাফল আজ প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষায় ২৩,০৫৭ (তেইশ হাজার সাতান্ন) জন উত্তীর্ণ হয়েছে। ২৯ মার্চ ২০২৪ এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৩ জন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট www.mopme.gov.bd এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট www.dpe.gov.bd -তে ফলাফল পাওয়া যাবে। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা মোবাইলেও মেসেজ পাবেন। মৌখিক পরীক্ষার তারিখ, সময় ও স্থান পরবর্তীতে জানানো হবে।
বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে শুধু সরকারি কর্মকর্তা (নবম গ্রেডের নিচে নয়) বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (পঞ্চম গ্রেডের নিচে নয়) মনোনয়ন দেওয়ার বিধান সংবলিত প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালত রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন যে, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে কেবল সরকারি কর্মকর্তা বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মনোনয়নের এই বিধান কেন অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না। আদেশের দিন ও বেঞ্চ বুধবার (২২ অক্টোবর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। রিটের কারণ ও আইনজীবীর বক্তব্য বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি পদে কেবল সরকারি কর্মকর্তাদের মনোনয়নের এই বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট মোকছেদুর রহমান আবির রিটটি দায়ের করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, বেসরকারি স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের মনোনয়নের বিধান বৈষম্যমূলক। এই যুক্তিতেই আদালত প্রজ্ঞাপনটির কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন। প্রজ্ঞাপনের মূল বিষয়বস্তু গত সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া অন্য কেউ হতে পারবেন না। এই পদে নবম গ্রেড বা তার ওপরের পদে কর্মরত কিংবা পঞ্চম গ্রেড বা তার ওপরের পদে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এছাড়া, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভাপতির প্রার্থীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা সমমান হতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সভাপতি হতে পারবেন। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক খন্দোকার এহসানুল কবির জানান, বিদ্যমান নিয়মে সামান্য সংশোধন এনে শুধু সভাপতি পদটির জন্য এই পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
ঢাকা: মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে উন্নয়নমূলক কাজের নামে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাত্র দুই মাসের মধ্যে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক ও মজুরি খাতে ৩,১৮,৮৯,০৫৪/- (তিন কোটি আঠারো লক্ষ ঊননব্বই হাজার চুয়ান্ন) টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (PPR) সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন করা হয়েছে। কোটি কোটি টাকার মজুরি, টেন্ডার নেই তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২0২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (প্রায় দুই মাস) এডহক কমিটির নির্দেশে ৪ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়। এই কাজের মধ্যে নির্মাণ ও মেরামতের জন্য ব্যবহৃত শ্রমিক মজুরি বাবদ ব্যয়িত অর্থের হিসাব নিম্নরূপ: কাজের বিবরণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যয়িত টাকার পরিমাণ রং করা (লেবার) বান্না এন্টারপ্রাইজ ১,৩০,৯২,৯৭৭/- রাজমিস্ত্রী, কাঠ, সেনিটারী (লেবার) মেসার্স শিলা এন্টারপ্রাইজ ৬১,২০,৪৬০/- টাইলস, মোজাইক ও ইলেকট্রিক (লেবার) তানভীর এন্টারপ্রাইজ ১৩,৭৭,৪৭৪/- গ্রীল, অভিভাবক সেড (লেবার) মেসার্স মোল্লা ওয়েল্ড ১২,৪৮,১৪৩/- মোট শ্রমিক মজুরি ব্যয় ৩,১৮,৮৯,০৫৪/- (এছাড়া মালামাল ক্রয় বাবদ আরও ১,২৩,৭৪,৪৩৭/- টাকা নগদে ব্যয় করা হয়)। বিধি লঙ্ঘন করে স্পট কোটেশন তদন্তে ডিআইএ নিশ্চিত করেছে যে, এই বিশাল অঙ্কের মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার দরপত্র বা টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। পিপিআর-এর লঙ্ঘন: পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (PPR) অনুযায়ী, ৬,০০,০০০/- (ছয় লক্ষ) টাকার অধিক মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদান করতে হয়। ক্ষমতার অপব্যবহার: কিন্তু মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৬ লক্ষ টাকার সীমা অতিক্রম করে প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা ব্যয় করেছে 'স্পট কোটেশনের' মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে কাজ দেওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক দর নিশ্চিত হয়নি, যা আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের পথ সুগম করেছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। বাতিল কমিটি দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদন আরও জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নতুন এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ (১৮/১১/২০২৪) জারির পরও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ আখলাক আহম্মেদ পূর্বের (বাতিলকৃত) এডহক কমিটির মাধ্যমেই কার্যক্রম চালিয়ে যান। বাতিল কমিটির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের এই উন্নয়ন কাজ করানো হয়েছে, যা মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করার শামিল। রাজস্ব ফাঁকি উন্নয়ন কাজের জন্য ঠিকাদারদের পরিশোধিত ৩,১২,১৮,০০০/- টাকার ওপর ধার্যকৃত ভ্যাট ও আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি। শ্রমিক মজুরি বাবদ ব্যয়িত বিপুল অঙ্কের অর্থের ওপরও এই রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। সরকারি কোষাগারে ফেরতযোগ্য মোট ৩৮,০২,২৫০/- (আটত্রিশ লক্ষ দুই হাজার দুইশত পঞ্চাশ) টাকা অবিলম্বে জমা দেওয়ার জন্য প্রতিবেদনে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত এই ঘটনা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়, যেখানে একটি বাতিল কমিটি মাত্র দুই মাসে বিপুল অঙ্কের টাকা টেন্ডার ছাড়াই মজুরি খাতে ব্যয় করে সরকারি বিধিমালাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেছে। ( দ্বিতীয় পর্ব আসছে শিগগিরই, কারা কারা এই লুটপাটে জড়িত তাদেরও পরিচয় তুলে ধরা হবে )