বাংলাদেশ–জার্মান কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের 'অ্যাসেট' (ASSET) প্রকল্পের অধীনে কর্মসংস্থানের উপযোগী পাঁচটি স্বল্পমেয়াদি কোর্সে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। বিশেষ সুবিধা হলো, এই কোর্সটিতে সরকারিভাবে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগ্রহী নারী ও পুরুষ প্রশিক্ষণার্থীদের আগামী ২৪ জুলাই ২০২৫, বিকেল চারটার মধ্যে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। কোর্স ও যোগ্যতা: কম্পিটেন্সি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী মোট পাঁচটি কোর্সে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কোর্সের ভিত্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিন্নতা রয়েছে: কোর্সের নাম শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশিক্ষণার্থী ১. ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স (ইআইএম) অষ্টম শ্রেণি নারী ও পুরুষ ২. টেইলরিং অ্যান্ড ড্রেস মেকিং অষ্টম শ্রেণি নারী ও পুরুষ ৩. রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং অষ্টম শ্রেণি নারী ও পুরুষ ৪. কম্পিউটার অপারেশন এসএসসি পাস শুধু নারী ৫. ক্যাড অপারেশন এসএসসি পাস শুধু নারী প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য সুবিধা: কোর্সের মেয়াদ: ৩ মাস (৩৬০ ঘণ্টা)। আসনসংখ্যা: প্রতিটি কোর্সে ২৪টি করে আসন রয়েছে। ভাতা: প্রশিক্ষণার্থীরা অ্যাসেট প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী সব সুবিধা ও ভাতা পাবেন। আবেদনের প্রক্রিয়া ও সময়সূচি: আগ্রহী প্রার্থীরা নিম্নোক্ত কাগজপত্রসহ আবেদন জমা দিতে পারবেন: প্রার্থীর তিন কপি সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি। জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি। শিক্ষাগত যোগ্যতার ফটোকপি। ধাপ তারিখ সময় আবেদনের শেষ তারিখ ২৪ জুলাই ২০২৫ বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা (লটারি বা সাক্ষাৎকার) ২৮ জুলাই ২০২৫ সকাল ৯টায় (নিজ নিজ ট্রেডে) ফলাফল প্রকাশ ও ভর্তি ২৯ জুলাই ২০২৫ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি ৩০ জুলাই ২০২৫ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস শুরুর তারিখ ৩ আগস্ট ২০২৫ -
২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই শহীদদের পরিবারের সন্তানদের বিনা খরচে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাদের এই ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং সন্তানদের শিক্ষাজীবন নির্বিঘ্ন রাখতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে, দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজ এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোতে শহীদ পরিবারের সন্তানদের অবৈতনিক শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সমন্বয় শাখা থেকে সহকারী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবিরের স্বাক্ষরিত এক স্মারকের মাধ্যমে গত রবিবার (২০ অক্টোবর) বিষয়টি জানানো হয়। এতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ২১ সেপ্টেম্বর পাঠানো একটি চিঠির নির্দেশনা উল্লেখ করা হয়েছে
দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে সফল করতে হলে অবশ্যই জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থানের বাস্তব পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে বিএনপি এক কোটি তরুণকে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা দিয়ে কর্মে নিয়োজিত করার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার (তারিখটি অনুমিত) বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ (ইআরআই) এর উদ্যোগে আয়োজিত "সোসিও ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ থ্রো টিভ্যাট: প্রবলেমস এন্ড প্রসপেক্টস" শীর্ষক সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান এসব কথা বলেন। ড. মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ যুবক এবং যুব শ্রেণিতে বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঘোষিত 'যুবকের হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তরের' প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং বিএনপি এই যুব শ্রেণিকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। মূল প্রবন্ধে কর্মসংস্থান ও দক্ষতার অভাব: সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইআরআই এর সভাপতি ও সাবেক সফল শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন। মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের বর্তমান কর্মসংস্থান পরিস্থিতির হতাশার চিত্র তুলে ধরা হয়: বাংলাদেশের ২০ শতাংশ যুবক বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক হলেও মাত্র ১৬.৮ শতাংশ যুবক কর্মসংস্থান করতে পেরেছে। ইউজিসির ২০২৪ সালের জরিপ অনুযায়ী, প্রতিবছর দশ লাখ যুবক জব মার্কেটে প্রবেশ করলেও অর্ধেকেরও কম যুবক কর্মসংস্থান পায়। বিএমইটির ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর দশ লাখ যুবক বিদেশে চাকরির জন্য গেলেও এদের অধিকাংশই অদক্ষ, ফলে তারা কম বেতন পায় ও নিম্নমানের কাজে নিয়োজিত হয়। সুতরাং, প্রশিক্ষিত জনগণ ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারিগরি শিক্ষায় বৈশ্বিক উদাহরণ এবং বাংলাদেশ: প্রবন্ধে বিদেশে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার সফলতার উদাহরণ তুলে ধরা হয়: দেশ কারিগরি শিক্ষার দৃষ্টান্ত জার্মানি ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোকেশনাল শিক্ষা গ্রহণ করে কাজে প্রবেশ করে। মালয়েশিয়া প্রতিবছর বিশ লাখ যুবককে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা দান করে। সিঙ্গাপুর স্কিলস ফিউচার প্রোগ্রামের আওতায় শিক্ষার সঙ্গে কারখানার সংযোগ স্থাপন এবং বয়স নির্বিশেষে সবাইকে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেয়। ভিয়েতনাম শিক্ষার সঙ্গে ম্যানুফেকচারের লিংকআপ করে বেকারত্ব ৭ শতাংশের কমে নামিয়ে এনেছে। কিন্তু বাংলাদেশ কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় দৃশ্যমানভাবে পিছিয়ে আছে। এই উপলব্ধি থেকেই বিএনপি কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেছে। সুপারিশমালা এবং শিক্ষকদের প্রতি অঙ্গীকার: সেমিনারে উপস্থাপিত সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে: কারিগরি শিক্ষার উন্মুক্তকরণ ও এটিকে মূলধারার শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ। একটি একক অথরিটির মাধ্যমে একীভূত দক্ষতা শাসন ব্যবস্থা সৃষ্টি। কলকারখানার চাহিদা ভিত্তিক কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ ও শক্তিশালীকরণ। দক্ষতা উন্নয়ন তহবিল গঠন। ডিজিটাল ও সবুজ অর্থনীতির ওপর গুরুত্বারোপ। নারী সমাজকে সমানতালে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় সম্পৃক্তকরণ। সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করার বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী। তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে শিক্ষা তার একমাত্র 'ভিশন' হবে এবং শিক্ষকদের জাতীয়করণ, ভাতা বাড়ানোসহ কোনো বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না। অন্যান্য বক্তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত: ডা. এস এম জিয়াউদ্দিন হায়দার: কর্মসংস্থান বিহীন শিক্ষাকে অসম্পূর্ণ বিদ্যা আখ্যা দিয়ে শিক্ষাকে কর্মসংস্থানমুখী করার দাবি জানান। তিনি বলেন, বিএনপির ৩১ দফায় চাহিদা ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে সক্ষম শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়েছে এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে। অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া: সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষার পরিবর্তে তরুণ সমাজকে কর্মমুখী শিক্ষার ওপর আগ্রহী হতে আহ্বান জানান। ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ: দেশের অধিকাংশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং পড়ানো হলেও কর্পোরেট বডিতে চিফ অ্যাকাউন্টেন্টরা বাইরের, যা শিক্ষা আর বাস্তবতার মধ্যে ফারাক সৃষ্টি করেছে। এই ফারাক পূরণ করতে সিলেবাসকে নতুন করে সাজাতে হবে। ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শামসুন্নাহার: কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার কারিকুলামকে দেশ-বিদেশের চাহিদার উপযোগী করে তৈরি এবং শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির (বুটেক্স) ভিসি ড. জুলহাস উদ্দিন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন এবং অন্যান্য শিক্ষাবিদ ও নেতৃবৃন্দ।
দেশের টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজগুলোর (টিএসসি) প্রায় ৬২ শতাংশ আসন প্রতি বছর শূন্য থাকলেও সরকার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। শিক্ষক সংকট, পুরোনো পাঠ্যক্রম এবং কর্মসংস্থানের অভাবের মতো মৌলিক সমস্যা সমাধান না করেই অবকাঠামো নির্মাণের এই নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ১৪৯টি চালু টিএসসিতে নিম্ন মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই ৬০ শতাংশের বেশি আসন ফাঁকা ছিল। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ আসনের বিপরীতে ৯৭ হাজারের বেশি আসনই শূন্য ছিল। এই বিপুল শিক্ষার্থী সংকটের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শুরু হওয়া ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪২৯টি নতুন টিএসসি নির্মাণের কাজ এখনো চলমান। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে আরও প্রায় দুই লাখ ৮৪ হাজার নতুন আসন যুক্ত হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নের পরিবর্তে অবকাঠামো নির্মাণের দিকে সরকারের মনোযোগ বেশি ছিল বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। ২০১৪ সালে ৯২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০টি টিএসসি নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও, ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ২০২৫ সালেও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। প্রকল্পটির ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫২৫ কোটি টাকায়। সম্প্রতি এর মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এরপর ২০২০ সালে ২০ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ৩২৯টি টিএসসি নির্মাণের আরেকটি বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, আগের প্রকল্প শেষ না করেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কারণে কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহ হারাচ্ছে। ‘এডুকেশন ওয়াচ–২০২২’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭০ শতাংশের বেশি শিক্ষক মনে করেন কারিগরি পাঠ্যক্রম বাজারের চাহিদার তুলনায় সেকেলে। নতুন চালু হওয়া ৯১টি টিএসসিতেও প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষকের পদ শূন্য, যার ফলে শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ডিগ্রি শেষ করেও অনেক শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাচ্ছেন না। জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের ৩৮ শতাংশই বেকার। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না। নতুন প্রকল্প গ্রহণের আগে কারিকুলাম আধুনিকীকরণ, প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি উন্নয়ন এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার মান নিশ্চিত করা জরুরি।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে “কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের সুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভর্তির প্রচারণা” বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও সমানতালে বেকারত্বের সংখ্যাও বাড়ছে। বেকারত্ব দূর করতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বুঝতে হবে, আগামীর বিশ্ব হলো কারিগরি ও প্রযুক্তিনির্ভর।” তিনি আরও বলেন, “কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে আমরা দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে কাজ করছি। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করলে কোনো শিক্ষার্থী বেকার থাকে না। ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে। সরকার শিক্ষার্থীদের কারিগরিমুখী করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ মিকাইল, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক কাজী ফারুক আহমদ, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) মো. আনোয়ারুল কবির এবং কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী।সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কারিগরি অধিদপ্তর ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা, বৃহত্তর কুমিল্লার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, ইমাম ও সাংবাদিকবৃন্দ। উদ্বোধনী বক্তব্যের পর কারিগরি শিক্ষায় করণীয় ও সফলতা নিয়ে একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব ও অতিথিদের মতবিনিময় অনুষ্ঠান। সেমিনারে প্রধান অতিথি ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম কারিগরি শিক্ষার সুফল ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক (ভোকেশনাল/বিএম/ডিপ্লোমা ইন কমার্স) পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে। এ বছর মোট ১ লাখ ৫৬১০ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়, যার মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬৬ হাজার ১৮৫ জন। ফলে সামগ্রিকভাবে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ছিলেন ৭৭ হাজার ২৯১ জন এবং ছাত্রী ২৮ হাজার ৩১৯ জন। ছাত্রদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪৫ হাজার ১৪৩ জন, পাসের হার ৫৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। অপরদিকে, ছাত্রীদের মধ্যে ২১ হাজার ৪২ জন পাস করেছেন, যেখানে পাসের হার ৭৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। এছাড়া বোর্ডে মোট ১,৬১০ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে ছাত্র ৩৯৭ জন এবং ছাত্রী ১,২১৩ জন। চলতি বছরে ৭৩৩টি কেন্দ্র ও ১,৮৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষায় অংশ নেয়।
সরকার নতুন নীতিমালা জারি করে ভাড়া বাড়িতে দাখিল ও আলিম মাদ্রাসা স্থাপন, পাঠদান ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির অনুমতি দিয়েছে। এ লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের পুরোনো নীতিমালা সংশোধন করে ‘বেসরকারি মাদ্রাসা (দাখিল ও আলিম) স্থাপন, পাঠদান ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা-২০২৫’ প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। ভাড়া বাড়িতে মাদ্রাসা অনুমোদন নীতিমালায় বলা হয়েছে— সিটি করপোরেশন, শিল্প এলাকা ও পৌরসভায় ভাড়া বাড়িতে মাদ্রাসা স্থাপন করা যাবে। ভাড়ার চুক্তিপত্র কমপক্ষে ৬ বছরের হতে হবে। মাদ্রাসার নামে ব্যাংকে অন্তত ৫ লাখ টাকার ডিপোজিট থাকতে হবে। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, ট্রাস্ট, মিশন, এনজিও, ফাউন্ডেশন বা দাতব্য সংস্থা এসব মাদ্রাসা পরিচালনা করতে পারবে। দূরত্ব ও জনসংখ্যার শর্ত সিটি করপোরেশন, শিল্প এলাকা ও প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় দাখিল মাদ্রাসার মধ্যে ১ কিলোমিটার, আলিম মাদ্রাসার মধ্যে ২ কিলোমিটার দূরত্ব থাকতে হবে। মফস্বলে দাখিল মাদ্রাসার জন্য দূরত্ব হবে ২ কিলোমিটার, আলিমের জন্য ৩ কিলোমিটার। দাখিল মাদ্রাসা স্থাপনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ন্যূনতম ১০ হাজার মানুষ থাকতে হবে। আলিম মাদ্রাসার ক্ষেত্রে ন্যূনতম জনসংখ্যা হতে হবে ৪০ হাজার। পাঠদানের অনুমোদন দাখিল সহশিক্ষা মাদ্রাসায় প্রতি শ্রেণিতে গড়ে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। দাখিল বালিকা মাদ্রাসায় প্রতি শ্রেণিতে গড়ে ২০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। আলিম সহশিক্ষা মাদ্রাসায় প্রতি শ্রেণিতে গড়ে ৩০ জন শিক্ষার্থী এবং আলিম বালিকা মাদ্রাসায় গড়ে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। বিশেষ ছাড়ের বিধান নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনগ্রসর এলাকা, পাহাড়ি অঞ্চল, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, দ্বীপ, বস্তি, নারী শিক্ষা বা সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা যাবে। সিটি করপোরেশন, শিল্প এলাকা ও প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় জনসংখ্যার শর্ত ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শিথিলযোগ্য। তবে সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়া কোনো মাদ্রাসার অনুমোদন মিলবে না। শিক্ষা বোর্ডের মন্তব্য বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক বলেন, “অনেক প্রাইভেট মাদ্রাসা আগে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের নামে পরীক্ষা দিতো। এখন তারা নিজেদের নামে পরীক্ষা দিতে পারবে। সরকার আর্থিকভাবে ব্যয় বহন করছে না, অথচ এসব প্রতিষ্ঠান ভালো পারফর্ম করছে। তাই তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত থাকবে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে।” দেশে মাদ্রাসার বর্তমান চিত্র (সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী) স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা (প্রথম–পঞ্চম শ্রেণি): ৩,৪৩৩টি (এমপিওভুক্ত ১,৫১৯টি, শিক্ষক ৪,৪৩১ জন) দাখিল মাদ্রাসা (ষষ্ঠ–দশম শ্রেণি): ৬,৫৯৩টি (এমপিওভুক্ত ৫,৩৭১টি, শিক্ষক ৭০,৯৮২ জন) আলিম মাদ্রাসা (একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণি): ১,৫৫৮টি (এমপিওভুক্ত ৯৮২টি, শিক্ষক ২০,০৮১ জন) কামিল মাদ্রাসা (স্নাতকোত্তর স্তর): ২১৯টি (এমপিওভুক্ত ১৪৫টি, শিক্ষক ৫,০৭৯ জন) এমপিওবিহীন মাদ্রাসা: প্রায় ১,৭৩০টি সব মিলিয়ে, এমপিও ও নন-এমপিও উভয় ধরনের মাদ্রাসাই সরকারের অনুমোদন নিয়েই পরিচালিত হয়ে আসছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকাশিত বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দুর্গাপূজা উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে ছুটির দিনগুলোতে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পূজার আমেজ শুরু হচ্ছে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকেই। কারণ ওই দুই দিন (২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর) সাপ্তাহিক বন্ধের পর ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে পূজার ছুটি কার্যকর হবে। একটানা ছুটি কাটিয়ে ৭ অক্টোবরের পর আবার নতুন উদ্যমে শুরু হবে ক্লাস। একইভাবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতেও ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত টানা বারো দিনের ছুটি মিলবে। ৮ অক্টোবর থেকে আবার গরমিল ছাড়া ক্লাস চলবে যথারীতি। অন্যদিকে, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা ভিন্ন। শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্গাপূজার জন্য ছুটি থাকবে মাত্র দুই দিন—১ ও ২ অক্টোবর। তবে এর সঙ্গে যোগ হবে ৩ ও ৪ অক্টোবরের সাপ্তাহিক বন্ধ। ফলে মোট ছুটি দাঁড়াবে চার দিনে। ৫ অক্টোবর থেকে পুরোদমে আবার চলবে পাঠদান। 👉 প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছুটি দীর্ঘায়িত হলেও মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তুলনামূলকভাবে সীমিত এই ছুটির মেয়াদ শিক্ষার্থীদের পাঠচর্চার ধারাবাহিকতায় রাখবে এক ধাপ এগিয়ে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর) চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠন এবং ১ ডিসেম্বর থেকে সব অ্যাডহক কমিটি বিলুপ্ত করার যে পরিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয় জারি করেছিল, তার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ থেকে গত ৮ সেপ্টেম্বর পরিপত্রটি জারি করা হয়। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন। আইনজীবীদের তথ্যমতে, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা–২০২৪ এ চলতি বছরের ২৮ ও ৩১ আগস্ট সংশোধনী আনে ঢাকাসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড। সংশোধনের মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোনয়নসংক্রান্ত ১৩(১) বিধি এবং যোগ্যতাসংক্রান্ত ৬৪(৩) বিধি পরিবর্তন করা হয়। এই দুই বিধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এমরান হোসেনসহ চারটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি গত রোববার রিট আবেদন করেন। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফখরুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মুজাহিদুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী। পরে আইনজীবী ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, দেশের নয়টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রায় ২০ হাজারের বেশি বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই বোর্ডগুলো ম্যানেজিং কমিটি পরিচালনাসংক্রান্ত প্রবিধানমালায় সংশোধন আনে, যেখানে বলা হয়েছে— সরকারি, আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নবম গ্রেডের নিচে নন এমন কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত হলে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে পারবেন। অর্থাৎ বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শুধুমাত্র সরকারি বা আধা সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ হতে পারবেন না। আগে যেখানে সভাপতি নির্বাচনের মাধ্যমে হতেন, সেখানে এখন এই যোগ্যতাসীমা আরোপ করা হয়েছে— যা আবেদনকারীদের মতে বৈষম্যমূলক। রিটে আদালতের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, সংশোধিত ১৩(১) এবং ৬৪(৩) বিধি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না। হাইকোর্ট রুল জারি করে ৮ সেপ্টেম্বরের পরিপত্রের কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। ফলে বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাডহক কমিটি আপাতত কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্ব খাতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা-২০২৩ এর ৩য় গ্রুপের ( ০৩ টি পার্বত্য জেলা ব্যতীত ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২১ টি জেলা) লিখিত পরীক্ষার ফলাফল আজ প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষায় ২৩,০৫৭ (তেইশ হাজার সাতান্ন) জন উত্তীর্ণ হয়েছে। ২৯ মার্চ ২০২৪ এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৩ জন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট www.mopme.gov.bd এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট www.dpe.gov.bd -তে ফলাফল পাওয়া যাবে। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা মোবাইলেও মেসেজ পাবেন। মৌখিক পরীক্ষার তারিখ, সময় ও স্থান পরবর্তীতে জানানো হবে।
বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে শুধু সরকারি কর্মকর্তা (নবম গ্রেডের নিচে নয়) বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (পঞ্চম গ্রেডের নিচে নয়) মনোনয়ন দেওয়ার বিধান সংবলিত প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালত রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন যে, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে কেবল সরকারি কর্মকর্তা বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মনোনয়নের এই বিধান কেন অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না। আদেশের দিন ও বেঞ্চ বুধবার (২২ অক্টোবর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। রিটের কারণ ও আইনজীবীর বক্তব্য বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি পদে কেবল সরকারি কর্মকর্তাদের মনোনয়নের এই বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট মোকছেদুর রহমান আবির রিটটি দায়ের করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, বেসরকারি স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের মনোনয়নের বিধান বৈষম্যমূলক। এই যুক্তিতেই আদালত প্রজ্ঞাপনটির কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন। প্রজ্ঞাপনের মূল বিষয়বস্তু গত সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া অন্য কেউ হতে পারবেন না। এই পদে নবম গ্রেড বা তার ওপরের পদে কর্মরত কিংবা পঞ্চম গ্রেড বা তার ওপরের পদে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এছাড়া, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভাপতির প্রার্থীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা সমমান হতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সভাপতি হতে পারবেন। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক খন্দোকার এহসানুল কবির জানান, বিদ্যমান নিয়মে সামান্য সংশোধন এনে শুধু সভাপতি পদটির জন্য এই পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
ঢাকা: মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে উন্নয়নমূলক কাজের নামে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাত্র দুই মাসের মধ্যে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক ও মজুরি খাতে ৩,১৮,৮৯,০৫৪/- (তিন কোটি আঠারো লক্ষ ঊননব্বই হাজার চুয়ান্ন) টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (PPR) সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন করা হয়েছে। কোটি কোটি টাকার মজুরি, টেন্ডার নেই তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২0২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (প্রায় দুই মাস) এডহক কমিটির নির্দেশে ৪ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়। এই কাজের মধ্যে নির্মাণ ও মেরামতের জন্য ব্যবহৃত শ্রমিক মজুরি বাবদ ব্যয়িত অর্থের হিসাব নিম্নরূপ: কাজের বিবরণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যয়িত টাকার পরিমাণ রং করা (লেবার) বান্না এন্টারপ্রাইজ ১,৩০,৯২,৯৭৭/- রাজমিস্ত্রী, কাঠ, সেনিটারী (লেবার) মেসার্স শিলা এন্টারপ্রাইজ ৬১,২০,৪৬০/- টাইলস, মোজাইক ও ইলেকট্রিক (লেবার) তানভীর এন্টারপ্রাইজ ১৩,৭৭,৪৭৪/- গ্রীল, অভিভাবক সেড (লেবার) মেসার্স মোল্লা ওয়েল্ড ১২,৪৮,১৪৩/- মোট শ্রমিক মজুরি ব্যয় ৩,১৮,৮৯,০৫৪/- (এছাড়া মালামাল ক্রয় বাবদ আরও ১,২৩,৭৪,৪৩৭/- টাকা নগদে ব্যয় করা হয়)। বিধি লঙ্ঘন করে স্পট কোটেশন তদন্তে ডিআইএ নিশ্চিত করেছে যে, এই বিশাল অঙ্কের মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার দরপত্র বা টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। পিপিআর-এর লঙ্ঘন: পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (PPR) অনুযায়ী, ৬,০০,০০০/- (ছয় লক্ষ) টাকার অধিক মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদান করতে হয়। ক্ষমতার অপব্যবহার: কিন্তু মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৬ লক্ষ টাকার সীমা অতিক্রম করে প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা ব্যয় করেছে 'স্পট কোটেশনের' মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে কাজ দেওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক দর নিশ্চিত হয়নি, যা আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের পথ সুগম করেছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। বাতিল কমিটি দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদন আরও জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নতুন এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ (১৮/১১/২০২৪) জারির পরও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ আখলাক আহম্মেদ পূর্বের (বাতিলকৃত) এডহক কমিটির মাধ্যমেই কার্যক্রম চালিয়ে যান। বাতিল কমিটির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের এই উন্নয়ন কাজ করানো হয়েছে, যা মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করার শামিল। রাজস্ব ফাঁকি উন্নয়ন কাজের জন্য ঠিকাদারদের পরিশোধিত ৩,১২,১৮,০০০/- টাকার ওপর ধার্যকৃত ভ্যাট ও আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি। শ্রমিক মজুরি বাবদ ব্যয়িত বিপুল অঙ্কের অর্থের ওপরও এই রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। সরকারি কোষাগারে ফেরতযোগ্য মোট ৩৮,০২,২৫০/- (আটত্রিশ লক্ষ দুই হাজার দুইশত পঞ্চাশ) টাকা অবিলম্বে জমা দেওয়ার জন্য প্রতিবেদনে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত এই ঘটনা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়, যেখানে একটি বাতিল কমিটি মাত্র দুই মাসে বিপুল অঙ্কের টাকা টেন্ডার ছাড়াই মজুরি খাতে ব্যয় করে সরকারি বিধিমালাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেছে। ( দ্বিতীয় পর্ব আসছে শিগগিরই, কারা কারা এই লুটপাটে জড়িত তাদেরও পরিচয় তুলে ধরা হবে )