বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন গ্রেডিং সিস্টেম ও কঠোর তদারকি আসছে
উচ্চশিক্ষায় সমন্বিত রূপান্তর আনতে দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন গ্রেডিং সিস্টেম ও ক্রেডিট ট্রান্সফার প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে করে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রেডিট অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা যাবে, ফলে শিক্ষার্থীরা সহজে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে।
এই প্রস্তাব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন–২০২৫ (সংশোধিত) খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে, যা শিগগিরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) জানায়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা গ্রেডিং স্কেল ও ক্রেডিট পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীরা নানা জটিলতায় পড়ছে—যেমন প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সময় আগের ক্রেডিট গ্রহণ না করা বা গ্রেড স্কেলে পার্থক্য তৈরি হওয়া। এই সমস্যা দূর করতেই নতুন বিধান যুক্ত করা হচ্ছে।
ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সংশোধিত আইনের খসড়াটি দ্রুত চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
আইন লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ জরিমানা ৫০ লাখ টাকা
নতুন আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ভঙ্গের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ জরিমানা ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে, যা আগে ছিল ১০ লাখ টাকা।
এছাড়া, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদ জালিয়াতির ঘটনা ঘটলে তার শিক্ষা কার্যক্রম অন্তত দুই বছরের জন্য বন্ধ রাখার বিধান রাখা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে বা সনদ বাতিল হলে আগের শিক্ষার্থীদের সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট আচার্য কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি স্বাক্ষর করবেন, যাতে নথির বৈধতা বজায় থাকে।
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আর সনদ দিতে পারবেন না
সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যরা কোনো শিক্ষার্থীর স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সার্টিফিকেট দিতে পারবেন না। তবে উপাচার্য না থাকলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত প্রো-ভিসি বা রেজিস্ট্রার সনদ দিতে পারবেন।
মূল সনদপত্রে কে স্বাক্ষর করবেন, তা এবার স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে—
-
উপাচার্য সনদপত্রে,
-
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মার্কসিট ও ট্রান্সক্রিপ্টে স্বাক্ষর করবেন।
আগের আইনে এই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল না।
ট্রাস্টি বোর্ডে একই পরিবারের পাঁচজনের বেশি সদস্য নয়
ট্রাস্টি বোর্ডের গঠনে নতুন নিয়ন্ত্রণ আনা হচ্ছে। এখন থেকে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে একই পরিবারের পাঁচজনের বেশি সদস্য থাকতে পারবেন না।
এছাড়া, ট্রাস্টি বোর্ডে সদস্য সংখ্যা ৯ থেকে ১৫ জনের মধ্যে হতে হবে। ইউজিসি জানিয়েছে, এতে বোর্ডে বৈচিত্র্য, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে এবং পারিবারিক প্রভাব কমবে।
নিয়োগ ও পরিচালনায় নতুন শর্ত
খসড়া আইনে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব আছে—
-
উপাচার্য, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে ইউজিসির নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন।
-
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য কমপক্ষে ৫ একর জমি থাকতে হবে।
-
টিউশন ফি নির্ধারণে ইউজিসির অনুমোদন নিতে হবে।
জবাবদিহিতা ও ভারসাম্য আনা
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলেছে, সংশোধিত আইন কার্যকর হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক কাঠামো শক্তিশালী হবে, একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কমবে, এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সমতা ও ন্যায়সঙ্গত পরিবেশ তৈরি হবে।
বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১১৬টি, যার মধ্যে ১০৫টিতে পাঠদান চলছে, এবং শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি।