মাদ্রাসা অনুমোদন, বাড়ছে স্বীকৃতি ও এমপিও সুযোগ
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দেশজুড়ে দ্রুত বাড়ছে বেসরকারি মাদ্রাসা স্থাপন, পাঠদান অনুমোদন ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি। শর্ত পূরণে ব্যর্থ মাদ্রাসাগুলোকেও এখন শর্ত শিথিল করে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি যেসব মাদ্রাসার অনুমোদন বাতিল বা স্থগিত ছিল, তাদেরও নতুন করে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সরকার মাদ্রাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে—ফলে নতুন ও ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত মাদ্রাসাগুলোও এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।
নতুন নীতিমালায় অনুমোদনের সুযোগ
সম্প্রতি ‘বেসরকারি মাদ্রাসা (দাখিল ও আলিম) স্থাপন, পাঠদান ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা–২০২৫’ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই নীতিমালার আওতায় এমন মাদ্রাসাগুলোও অনুমোদন পাচ্ছে, যারা আগে শর্ত পূরণ করতে না পারায় বাদ পড়েছিল। এমনকি ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত মাদ্রাসারাও এখন অনুমোদন পাচ্ছে।
পুরনো আদেশে নতুন স্বাক্ষর
সূত্র জানায়, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের আটকে থাকা অনুমোদনের আদেশগুলো নতুন করে জারি করা হচ্ছে। এসব আদেশে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ছবি সংবলিত প্যাড ব্যবহার করা হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, কিছু অফিস আদেশে এমন কর্মকর্তার স্বাক্ষর রয়েছে, যিনি বর্তমানে ঐ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত নন।
শর্ত শিথিল করে স্বীকৃতি
গত ৬ অক্টোবরের একাধিক আদেশে দেখা যায়, কয়েকটি দাখিল ও আলিম মাদ্রাসাকে শর্ত শিথিল করে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কুমিল্লার দেবিদ্বারের ফুলতলী দাখিল মাদ্রাসার অখণ্ড জমি ৬০ শতাংশের পরিবর্তে ৫৪ শতাংশ থাকা সত্ত্বেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার ঝাউবোনা মহিলা মাদ্রাসাকেও একইভাবে ছাড় দেওয়া হয়।
এছাড়া পাবনা, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ভোলার কয়েকটি মাদ্রাসার বাতিল আদেশ প্রত্যাহার করে নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বিস্তারিত ব্যাখ্যা মন্ত্রণালয়ের
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব এসএম মাসুদুল হক বলেন, “এই অনুমোদন প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কারণে সময় লেগেছে। আগের কর্মকর্তা একেএম লুৎফর রহমানের স্বাক্ষরে সেই সময়ের অনুমোদনগুলো এখন কার্যকর হয়েছে।”
ভাড়াবাড়ির মাদ্রাসার জন্যও সুযোগ
১৯৯৭ সালের পুরনো নীতিমালার সংশোধিত সংস্করণে এখন যুক্ত হয়েছে ভাড়াবাড়িতে মাদ্রাসা পরিচালনার অনুমোদন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক বলেন, “অনেক বেসরকারি মাদ্রাসা আগে অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে পরীক্ষা দিত। এখন তারা নিজেদের নামে পরীক্ষা দিতে পারবে। সরকারকে কোনো বাড়তি খরচও বহন করতে হবে না।”
এমপিও নীতিমালায় ছাড়
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন করছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী—
-
ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জমির পরিমাণ ৩৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
-
ছাত্রসংখ্যার শর্ত ১৫০ জন থেকে কমিয়ে ১২৫ জন করা হয়েছে।
এসএম মাসুদুল হক জানান, “দাখিল, আলিম ও ফাজিল স্তরের এমপিও নীতিমালা সংশোধন ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে।”