কুমিল্লায় কারিগরি শিক্ষার সুফল ও ভর্তির প্রচারণা বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগেকারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের সুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ভর্তির প্রচারণাবিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি  কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কারিগরি মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব . . . কবিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও সমানতালে বেকারত্বের সংখ্যাও বাড়ছে। বেকারত্ব দূর করতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বুঝতে হবে, আগামীর বিশ্ব হলো কারিগরি প্রযুক্তিনির্ভর।

তিনি আরও বলেন, “কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে আমরা দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে কাজ করছি। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করলে কোনো শিক্ষার্থী বেকার থাকে না। ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে। সরকার শিক্ষার্থীদের কারিগরিমুখী করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার, কারিগরি মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ মিকাইল, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক কাজী ফারুক আহমদ, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) মো. আনোয়ারুল কবির এবং কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী।সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কারিগরি অধিদপ্তর শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা, বৃহত্তর কুমিল্লার জেলা উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, ইমাম সাংবাদিকবৃন্দ।

উদ্বোধনী বক্তব্যের পর কারিগরি শিক্ষায় করণীয় সফলতা নিয়ে একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব অতিথিদের মতবিনিময় অনুষ্ঠান।

সেমিনারে প্রধান অতিথি . . . কবিরুল ইসলাম কারিগরি শিক্ষার সুফল ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন।

 

মন্তব্য করুন

২০২৫ সালের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি (ভোকেশনাল/বিএম/ডিপ্লোমা ইন কমার্স) পরীক্ষার ফল প্রকাশ

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক (ভোকেশনাল/বিএম/ডিপ্লোমা ইন কমার্স) পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে। এ বছর মোট ১ লাখ ৫৬১০ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়, যার মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬৬ হাজার ১৮৫ জন। ফলে সামগ্রিকভাবে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ছিলেন ৭৭ হাজার ২৯১ জন এবং ছাত্রী ২৮ হাজার ৩১৯ জন। ছাত্রদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪৫ হাজার ১৪৩ জন, পাসের হার ৫৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। অপরদিকে, ছাত্রীদের মধ্যে ২১ হাজার ৪২ জন পাস করেছেন, যেখানে পাসের হার ৭৪ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এছাড়া বোর্ডে মোট ১,৬১০ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে ছাত্র ৩৯৭ জন এবং ছাত্রী ১,২১৩ জন।

চলতি বছরে ৭৩৩টি কেন্দ্র ও ১,৮৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষায় অংশ নেয়।

মন্তব্য করুন

বাংলাদেশ–জার্মান কারিগরি কেন্দ্রে বিনা মূল্যে পাঁচটি কোর্সে প্রশিক্ষণ, আবেদন ২৪ জুলাই পর্যন্ত

বাংলাদেশ–জার্মান কারিগরি কেন্দ্র
বাংলাদেশ–জার্মান কারিগরি কেন্দ্র

বাংলাদেশ–জার্মান কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের 'অ্যাসেট' (ASSET) প্রকল্পের অধীনে কর্মসংস্থানের উপযোগী পাঁচটি স্বল্পমেয়াদি কোর্সে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। বিশেষ সুবিধা হলো, এই কোর্সটিতে সরকারিভাবে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

আগ্রহী নারী ও পুরুষ প্রশিক্ষণার্থীদের আগামী ২৪ জুলাই ২০২৫, বিকেল চারটার মধ্যে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।

কোর্স ও যোগ্যতা:

কম্পিটেন্সি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী মোট পাঁচটি কোর্সে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কোর্সের ভিত্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিন্নতা রয়েছে:

কোর্সের নাম

শিক্ষাগত যোগ্যতা

প্রশিক্ষণার্থী

১. ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স (ইআইএম)

অষ্টম শ্রেণি

নারী ও পুরুষ

২. টেইলরিং অ্যান্ড ড্রেস মেকিং

অষ্টম শ্রেণি

নারী ও পুরুষ

৩. রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং

অষ্টম শ্রেণি

নারী ও পুরুষ

৪. কম্পিউটার অপারেশন

এসএসসি পাস

শুধু নারী

৫. ক্যাড অপারেশন

এসএসসি পাস

শুধু নারী

প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য সুবিধা:

  • কোর্সের মেয়াদ: ৩ মাস (৩৬০ ঘণ্টা)।

  • আসনসংখ্যা: প্রতিটি কোর্সে ২৪টি করে আসন রয়েছে।

  • ভাতা: প্রশিক্ষণার্থীরা অ্যাসেট প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী সব সুবিধা ও ভাতা পাবেন।

আবেদনের প্রক্রিয়া ও সময়সূচি:

আগ্রহী প্রার্থীরা নিম্নোক্ত কাগজপত্রসহ আবেদন জমা দিতে পারবেন:

  • প্রার্থীর তিন কপি সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

  • জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি।

  • শিক্ষাগত যোগ্যতার ফটোকপি।

ধাপ

তারিখ

সময়

আবেদনের শেষ তারিখ

২৪ জুলাই ২০২৫

বিকেল ৪টা পর্যন্ত

ভর্তি পরীক্ষা (লটারি বা সাক্ষাৎকার)

২৮ জুলাই ২০২৫

সকাল ৯টায় (নিজ নিজ ট্রেডে)

ফলাফল প্রকাশ ও ভর্তি

২৯ জুলাই ২০২৫

সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত

অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি

৩০ জুলাই ২০২৫

সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত

ক্লাস শুরুর তারিখ

৩ আগস্ট ২০২৫

-

মন্তব্য করুন

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সন্তানদের জন্য বিনা মূল্যে শিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে সরকার

২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই শহীদদের পরিবারের সন্তানদের বিনা খরচে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাদের এই ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং সন্তানদের শিক্ষাজীবন নির্বিঘ্ন রাখতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে, দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজ এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোতে শহীদ পরিবারের সন্তানদের অবৈতনিক শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সমন্বয় শাখা থেকে সহকারী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবিরের স্বাক্ষরিত এক স্মারকের মাধ্যমে গত রবিবার (২০ অক্টোবর) বিষয়টি জানানো হয়। এতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ২১ সেপ্টেম্বর পাঠানো একটি চিঠির নির্দেশনা উল্লেখ করা হয়েছে

মন্তব্য করুন

কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে যুবকদের জনসম্পদে রূপান্তরে বিএনপির কর্মপরিকল্পনা: ড. মঈন খান

কারিগরি শিক্ষায় ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। কোলাজ- এডুকেশন বাংলা
কারিগরি শিক্ষায় ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। কোলাজ- এডুকেশন বাংলা

দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে সফল করতে হলে অবশ্যই জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থানের বাস্তব পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে বিএনপি এক কোটি তরুণকে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা দিয়ে কর্মে নিয়োজিত করার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

গতকাল শনিবার (তারিখটি অনুমিত) বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ (ইআরআই) এর উদ্যোগে আয়োজিত "সোসিও ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ থ্রো টিভ্যাট: প্রবলেমস এন্ড প্রসপেক্টস" শীর্ষক সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান এসব কথা বলেন।

ড. মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ যুবক এবং যুব শ্রেণিতে বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঘোষিত 'যুবকের হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তরের' প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং বিএনপি এই যুব শ্রেণিকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

মূল প্রবন্ধে কর্মসংস্থান ও দক্ষতার অভাব:

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইআরআই এর সভাপতি ও সাবেক সফল শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন। মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের বর্তমান কর্মসংস্থান পরিস্থিতির হতাশার চিত্র তুলে ধরা হয়:

  • বাংলাদেশের ২০ শতাংশ যুবক বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক হলেও মাত্র ১৬.৮ শতাংশ যুবক কর্মসংস্থান করতে পেরেছে।

  • ইউজিসির ২০২৪ সালের জরিপ অনুযায়ী, প্রতিবছর দশ লাখ যুবক জব মার্কেটে প্রবেশ করলেও অর্ধেকেরও কম যুবক কর্মসংস্থান পায়।

  • বিএমইটির ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর দশ লাখ যুবক বিদেশে চাকরির জন্য গেলেও এদের অধিকাংশই অদক্ষ, ফলে তারা কম বেতন পায় ও নিম্নমানের কাজে নিয়োজিত হয়।

  • সুতরাং, প্রশিক্ষিত জনগণ ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।

কারিগরি শিক্ষায় বৈশ্বিক উদাহরণ এবং বাংলাদেশ:

প্রবন্ধে বিদেশে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার সফলতার উদাহরণ তুলে ধরা হয়:

দেশ কারিগরি শিক্ষার দৃষ্টান্ত
জার্মানি ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোকেশনাল শিক্ষা গ্রহণ করে কাজে প্রবেশ করে।
মালয়েশিয়া প্রতিবছর বিশ লাখ যুবককে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা দান করে।
সিঙ্গাপুর স্কিলস ফিউচার প্রোগ্রামের আওতায় শিক্ষার সঙ্গে কারখানার সংযোগ স্থাপন এবং বয়স নির্বিশেষে সবাইকে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেয়।
ভিয়েতনাম শিক্ষার সঙ্গে ম্যানুফেকচারের লিংকআপ করে বেকারত্ব ৭ শতাংশের কমে নামিয়ে এনেছে।

কিন্তু বাংলাদেশ কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় দৃশ্যমানভাবে পিছিয়ে আছে। এই উপলব্ধি থেকেই বিএনপি কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেছে।

সুপারিশমালা এবং শিক্ষকদের প্রতি অঙ্গীকার:

সেমিনারে উপস্থাপিত সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • কারিগরি শিক্ষার উন্মুক্তকরণ ও এটিকে মূলধারার শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ।

  • একটি একক অথরিটির মাধ্যমে একীভূত দক্ষতা শাসন ব্যবস্থা সৃষ্টি।

  • কলকারখানার চাহিদা ভিত্তিক কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ ও শক্তিশালীকরণ।

  • দক্ষতা উন্নয়ন তহবিল গঠন।

  • ডিজিটাল ও সবুজ অর্থনীতির ওপর গুরুত্বারোপ।

  • নারী সমাজকে সমানতালে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় সম্পৃক্তকরণ।

সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করার বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী। তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে শিক্ষা তার একমাত্র 'ভিশন' হবে এবং শিক্ষকদের জাতীয়করণ, ভাতা বাড়ানোসহ কোনো বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না।

অন্যান্য বক্তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত:

  • ডা. এস এম জিয়াউদ্দিন হায়দার: কর্মসংস্থান বিহীন শিক্ষাকে অসম্পূর্ণ বিদ্যা আখ্যা দিয়ে শিক্ষাকে কর্মসংস্থানমুখী করার দাবি জানান। তিনি বলেন, বিএনপির ৩১ দফায় চাহিদা ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে সক্ষম শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়েছে এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

  • অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া: সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষার পরিবর্তে তরুণ সমাজকে কর্মমুখী শিক্ষার ওপর আগ্রহী হতে আহ্বান জানান।

  • ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ: দেশের অধিকাংশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং পড়ানো হলেও কর্পোরেট বডিতে চিফ অ্যাকাউন্টেন্টরা বাইরের, যা শিক্ষা আর বাস্তবতার মধ্যে ফারাক সৃষ্টি করেছে। এই ফারাক পূরণ করতে সিলেবাসকে নতুন করে সাজাতে হবে।

  • ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শামসুন্নাহার: কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার কারিকুলামকে দেশ-বিদেশের চাহিদার উপযোগী করে তৈরি এবং শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির (বুটেক্স) ভিসি ড. জুলহাস উদ্দিন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন এবং অন্যান্য শিক্ষাবিদ ও নেতৃবৃন্দ।

মন্তব্য করুন

কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী সংকট, তবুও নতুন টেকনিক্যাল স্কুল নির্মাণ অব্যাহত

দেশের টেকনিক্যাল স্কুল কলেজগুলোর (টিএসসি) প্রায় ৬২ শতাংশ আসন প্রতি বছর শূন্য থাকলেও সরকার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। শিক্ষক সংকট, পুরোনো পাঠ্যক্রম এবং কর্মসংস্থানের অভাবের মতো মৌলিক সমস্যা সমাধান না করেই অবকাঠামো নির্মাণের এই নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ১৪৯টি চালু টিএসসিতে নিম্ন মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই ৬০ শতাংশের বেশি আসন ফাঁকা ছিল। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ আসনের বিপরীতে ৯৭ হাজারের বেশি আসনই শূন্য ছিল।

এই বিপুল শিক্ষার্থী সংকটের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শুরু হওয়া ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪২৯টি নতুন টিএসসি নির্মাণের কাজ এখনো চলমান। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে আরও প্রায় দুই লাখ ৮৪ হাজার নতুন আসন যুক্ত হবে।

শিক্ষার মানোন্নয়নের পরিবর্তে অবকাঠামো নির্মাণের দিকে সরকারের মনোযোগ বেশি ছিল বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। ২০১৪ সালে ৯২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০টি টিএসসি নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও, ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ২০২৫ সালেও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। প্রকল্পটির ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়িয়েছে হাজার ৫২৫ কোটি টাকায়। সম্প্রতি এর মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এরপর ২০২০ সালে ২০ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ৩২৯টি টিএসসি নির্মাণের আরেকটি বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, আগের প্রকল্প শেষ না করেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কারণে কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহ হারাচ্ছে।এডুকেশন ওয়াচ২০২২প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭০ শতাংশের বেশি শিক্ষক মনে করেন কারিগরি পাঠ্যক্রম বাজারের চাহিদার তুলনায় সেকেলে। নতুন চালু হওয়া ৯১টি টিএসসিতেও প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষকের পদ শূন্য, যার ফলে শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ডিগ্রি শেষ করেও অনেক শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাচ্ছেন না।

জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের ৩৮ শতাংশই বেকার।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক . মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না। নতুন প্রকল্প গ্রহণের আগে কারিকুলাম আধুনিকীকরণ, প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি উন্নয়ন এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার মান নিশ্চিত করা জরুরি।

 

 

মন্তব্য করুন

ভাড়া বাড়িতে দাখিল ও আলিম মাদ্রাসা অনুমোদনের নতুন নীতিমালা

 

সরকার নতুন নীতিমালা জারি করে ভাড়া বাড়িতে দাখিল ও আলিম মাদ্রাসা স্থাপন, পাঠদান ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির অনুমতি দিয়েছে। এ লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের পুরোনো নীতিমালা সংশোধন করে ‘বেসরকারি মাদ্রাসা (দাখিল ও আলিম) স্থাপন, পাঠদান ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা-২০২৫’ প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।


ভাড়া বাড়িতে মাদ্রাসা অনুমোদন

নীতিমালায় বলা হয়েছে—

  • সিটি করপোরেশন, শিল্প এলাকা ও পৌরসভায় ভাড়া বাড়িতে মাদ্রাসা স্থাপন করা যাবে।

  • ভাড়ার চুক্তিপত্র কমপক্ষে ৬ বছরের হতে হবে।

  • মাদ্রাসার নামে ব্যাংকে অন্তত ৫ লাখ টাকার ডিপোজিট থাকতে হবে।

  • ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, ট্রাস্ট, মিশন, এনজিও, ফাউন্ডেশন বা দাতব্য সংস্থা এসব মাদ্রাসা পরিচালনা করতে পারবে।


দূরত্ব ও জনসংখ্যার শর্ত

  • সিটি করপোরেশন, শিল্প এলাকা ও প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় দাখিল মাদ্রাসার মধ্যে ১ কিলোমিটার, আলিম মাদ্রাসার মধ্যে ২ কিলোমিটার দূরত্ব থাকতে হবে।

  • মফস্বলে দাখিল মাদ্রাসার জন্য দূরত্ব হবে ২ কিলোমিটার, আলিমের জন্য ৩ কিলোমিটার

  • দাখিল মাদ্রাসা স্থাপনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ন্যূনতম ১০ হাজার মানুষ থাকতে হবে।

  • আলিম মাদ্রাসার ক্ষেত্রে ন্যূনতম জনসংখ্যা হতে হবে ৪০ হাজার


পাঠদানের অনুমোদন

  • দাখিল সহশিক্ষা মাদ্রাসায় প্রতি শ্রেণিতে গড়ে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে।

  • দাখিল বালিকা মাদ্রাসায় প্রতি শ্রেণিতে গড়ে ২০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে।

  • আলিম সহশিক্ষা মাদ্রাসায় প্রতি শ্রেণিতে গড়ে ৩০ জন শিক্ষার্থী এবং আলিম বালিকা মাদ্রাসায় গড়ে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে।


বিশেষ ছাড়ের বিধান

নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনগ্রসর এলাকা, পাহাড়ি অঞ্চল, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, দ্বীপ, বস্তি, নারী শিক্ষা বা সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা যাবে।

  • সিটি করপোরেশন, শিল্প এলাকা ও প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় জনসংখ্যার শর্ত ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শিথিলযোগ্য

  • তবে সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়া কোনো মাদ্রাসার অনুমোদন মিলবে না।


শিক্ষা বোর্ডের মন্তব্য

বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক বলেন,
“অনেক প্রাইভেট মাদ্রাসা আগে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের নামে পরীক্ষা দিতো। এখন তারা নিজেদের নামে পরীক্ষা দিতে পারবে। সরকার আর্থিকভাবে ব্যয় বহন করছে না, অথচ এসব প্রতিষ্ঠান ভালো পারফর্ম করছে। তাই তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত থাকবে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে।”


দেশে মাদ্রাসার বর্তমান চিত্র (সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী)

  • স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা (প্রথম–পঞ্চম শ্রেণি): ৩,৪৩৩টি (এমপিওভুক্ত ১,৫১৯টি, শিক্ষক ৪,৪৩১ জন)

  • দাখিল মাদ্রাসা (ষষ্ঠ–দশম শ্রেণি): ৬,৫৯৩টি (এমপিওভুক্ত ৫,৩৭১টি, শিক্ষক ৭০,৯৮২ জন)

  • আলিম মাদ্রাসা (একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণি): ১,৫৫৮টি (এমপিওভুক্ত ৯৮২টি, শিক্ষক ২০,০৮১ জন)

  • কামিল মাদ্রাসা (স্নাতকোত্তর স্তর): ২১৯টি (এমপিওভুক্ত ১৪৫টি, শিক্ষক ৫,০৭৯ জন)

  • এমপিওবিহীন মাদ্রাসা: প্রায় ১,৭৩০টি

সব মিলিয়ে, এমপিও ও নন-এমপিও উভয় ধরনের মাদ্রাসাই সরকারের অনুমোদন নিয়েই পরিচালিত হয়ে আসছে।

মন্তব্য করুন
×