কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে যুবকদের জনসম্পদে রূপান্তরে বিএনপির কর্মপরিকল্পনা: ড. মঈন খান
দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে সফল করতে হলে অবশ্যই জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থানের বাস্তব পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে বিএনপি এক কোটি তরুণকে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা দিয়ে কর্মে নিয়োজিত করার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল শনিবার (তারিখটি অনুমিত) বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ (ইআরআই) এর উদ্যোগে আয়োজিত "সোসিও ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ থ্রো টিভ্যাট: প্রবলেমস এন্ড প্রসপেক্টস" শীর্ষক সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান এসব কথা বলেন।
ড. মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ যুবক এবং যুব শ্রেণিতে বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঘোষিত 'যুবকের হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তরের' প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং বিএনপি এই যুব শ্রেণিকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
মূল প্রবন্ধে কর্মসংস্থান ও দক্ষতার অভাব:
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইআরআই এর সভাপতি ও সাবেক সফল শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন। মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের বর্তমান কর্মসংস্থান পরিস্থিতির হতাশার চিত্র তুলে ধরা হয়:
-
বাংলাদেশের ২০ শতাংশ যুবক বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক হলেও মাত্র ১৬.৮ শতাংশ যুবক কর্মসংস্থান করতে পেরেছে।
-
ইউজিসির ২০২৪ সালের জরিপ অনুযায়ী, প্রতিবছর দশ লাখ যুবক জব মার্কেটে প্রবেশ করলেও অর্ধেকেরও কম যুবক কর্মসংস্থান পায়।
-
বিএমইটির ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর দশ লাখ যুবক বিদেশে চাকরির জন্য গেলেও এদের অধিকাংশই অদক্ষ, ফলে তারা কম বেতন পায় ও নিম্নমানের কাজে নিয়োজিত হয়।
-
সুতরাং, প্রশিক্ষিত জনগণ ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
কারিগরি শিক্ষায় বৈশ্বিক উদাহরণ এবং বাংলাদেশ:
প্রবন্ধে বিদেশে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার সফলতার উদাহরণ তুলে ধরা হয়:
| দেশ | কারিগরি শিক্ষার দৃষ্টান্ত |
| জার্মানি | ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোকেশনাল শিক্ষা গ্রহণ করে কাজে প্রবেশ করে। |
| মালয়েশিয়া | প্রতিবছর বিশ লাখ যুবককে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা দান করে। |
| সিঙ্গাপুর | স্কিলস ফিউচার প্রোগ্রামের আওতায় শিক্ষার সঙ্গে কারখানার সংযোগ স্থাপন এবং বয়স নির্বিশেষে সবাইকে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেয়। |
| ভিয়েতনাম | শিক্ষার সঙ্গে ম্যানুফেকচারের লিংকআপ করে বেকারত্ব ৭ শতাংশের কমে নামিয়ে এনেছে। |
কিন্তু বাংলাদেশ কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় দৃশ্যমানভাবে পিছিয়ে আছে। এই উপলব্ধি থেকেই বিএনপি কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেছে।
সুপারিশমালা এবং শিক্ষকদের প্রতি অঙ্গীকার:
সেমিনারে উপস্থাপিত সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে:
-
কারিগরি শিক্ষার উন্মুক্তকরণ ও এটিকে মূলধারার শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ।
-
একটি একক অথরিটির মাধ্যমে একীভূত দক্ষতা শাসন ব্যবস্থা সৃষ্টি।
-
কলকারখানার চাহিদা ভিত্তিক কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ ও শক্তিশালীকরণ।
-
দক্ষতা উন্নয়ন তহবিল গঠন।
-
ডিজিটাল ও সবুজ অর্থনীতির ওপর গুরুত্বারোপ।
-
নারী সমাজকে সমানতালে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় সম্পৃক্তকরণ।
সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করার বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী। তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে শিক্ষা তার একমাত্র 'ভিশন' হবে এবং শিক্ষকদের জাতীয়করণ, ভাতা বাড়ানোসহ কোনো বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না।
অন্যান্য বক্তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত:
-
ডা. এস এম জিয়াউদ্দিন হায়দার: কর্মসংস্থান বিহীন শিক্ষাকে অসম্পূর্ণ বিদ্যা আখ্যা দিয়ে শিক্ষাকে কর্মসংস্থানমুখী করার দাবি জানান। তিনি বলেন, বিএনপির ৩১ দফায় চাহিদা ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে সক্ষম শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়েছে এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।
-
অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া: সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষার পরিবর্তে তরুণ সমাজকে কর্মমুখী শিক্ষার ওপর আগ্রহী হতে আহ্বান জানান।
-
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ: দেশের অধিকাংশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং পড়ানো হলেও কর্পোরেট বডিতে চিফ অ্যাকাউন্টেন্টরা বাইরের, যা শিক্ষা আর বাস্তবতার মধ্যে ফারাক সৃষ্টি করেছে। এই ফারাক পূরণ করতে সিলেবাসকে নতুন করে সাজাতে হবে।
-
ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শামসুন্নাহার: কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার কারিকুলামকে দেশ-বিদেশের চাহিদার উপযোগী করে তৈরি এবং শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির (বুটেক্স) ভিসি ড. জুলহাস উদ্দিন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন এবং অন্যান্য শিক্ষাবিদ ও নেতৃবৃন্দ।