দেশের টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজগুলোর (টিএসসি) প্রায় ৬২ শতাংশ আসন প্রতি বছর শূন্য থাকলেও সরকার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। শিক্ষক সংকট, পুরোনো পাঠ্যক্রম এবং কর্মসংস্থানের অভাবের মতো মৌলিক সমস্যা সমাধান না করেই অবকাঠামো নির্মাণের এই নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ১৪৯টি চালু টিএসসিতে নিম্ন মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই ৬০ শতাংশের বেশি আসন ফাঁকা ছিল। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ আসনের বিপরীতে ৯৭ হাজারের বেশি আসনই শূন্য ছিল।
এই বিপুল শিক্ষার্থী সংকটের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শুরু হওয়া ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪২৯টি নতুন টিএসসি নির্মাণের কাজ এখনো চলমান। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে আরও প্রায় দুই লাখ ৮৪ হাজার নতুন আসন যুক্ত হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়নের পরিবর্তে অবকাঠামো নির্মাণের দিকে সরকারের মনোযোগ বেশি ছিল বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। ২০১৪ সালে ৯২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০টি টিএসসি নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও, ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ২০২৫ সালেও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। প্রকল্পটির ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫২৫ কোটি টাকায়। সম্প্রতি এর মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এরপর ২০২০ সালে ২০ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ৩২৯টি টিএসসি নির্মাণের আরেকটি বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, আগের প্রকল্প শেষ না করেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কারণে কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহ হারাচ্ছে। ‘এডুকেশন ওয়াচ–২০২২’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭০ শতাংশের বেশি শিক্ষক মনে করেন কারিগরি পাঠ্যক্রম বাজারের চাহিদার তুলনায় সেকেলে। নতুন চালু হওয়া ৯১টি টিএসসিতেও প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষকের পদ শূন্য, যার ফলে শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ডিগ্রি শেষ করেও অনেক শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাচ্ছেন না।
জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের ৩৮ শতাংশই বেকার।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না। নতুন প্রকল্প গ্রহণের আগে কারিকুলাম আধুনিকীকরণ, প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি উন্নয়ন এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার মান নিশ্চিত করা জরুরি।