বৃহৎ সঞ্চয়ের সন্ধানে: দুর্বল পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে 'ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক', ২০ হাজার কোটি টাকার সরকারি ভরসা!
ইতিহাস গড়ার পথে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত। আর্থিক সংকটে জর্জরিত পাঁচটি বেসরকারি শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূতকরণের এক ঐতিহাসিক প্রস্তাবনা নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এই বিশাল সমন্বয়ের ফলে দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে চলেছে, যার প্রাথমিক লক্ষ্য ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা।
৯ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্রিফিংয়ে নিশ্চিত করেন, দুর্বল ও সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি মোকাবেলা করতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
যে পাঁচ ব্যাংক মিশে যাচ্ছে এক স্রোতে
একীভূত হয়ে যে নতুন ব্যাংকটি গঠিত হবে, তার জন্য প্রাথমিকভাবে 'ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক' অথবা 'সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক' নামে দুটি প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তাদের পৃথক অস্তিত্ব বিলীন করে একটি বৃহত্তর শক্তিতে পরিণত হচ্ছে, তারা হলো—
১. ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ২. গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৩. ইউনিয়ন ব্যাংক ৪. এক্সিম ব্যাংক ৫. সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক
আমানত ও চাকরির নিরাপত্তা: সরকারের পূর্ণ আশ্বাস
এই একীভূতকরণের ফলে আমানতকারীদের মনে যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল, তার নিরসন করেছে সরকারের ঘোষণা। প্রেস সচিব দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন, "একীভূত হওয়ার পর কেউ চাকরি হারাবেন না। আগের আমানত সবাই ফেরত পাবেন।"
তবে আমানত ফেরতের প্রক্রিয়া হবে সুসংগঠিত। জানা গেছে, আমানত সুরক্ষা আইনের সংশোধনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে, যেসব গ্রাহকের আমানতের পরিমাণ ২ লক্ষ টাকা বা তার কম, তারা এককালীন পুরো অর্থ উত্তোলনের সুযোগ পাবেন। বাকি আমানতকারীদের অর্থ ধাপে ধাপে পরিশোধ করা হবে। আমানত সুরক্ষা আইনকে যুগোপযোগী করে তোলার সংশোধনীও উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছে।
প্রাথমিক মূলধন ও মালিকানা কৌশল
নতুন এই ব্যাংকের মেরুদণ্ড শক্তিশালী করতে সরকার এক বিশাল মূলধনের আশ্বাস দিয়েছে। ব্যাংকটির মূলধন হিসেবে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দেবে। এই অতিরিক্ত পুঁজির জোগান আসবে বাজেট, বৈদেশিক ঋণ এবং প্রয়োজনে ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ফান্ড থেকে।
মালিকানার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন থাকবে, যার তত্ত্বাবধানে থাকবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে ব্যাংকটিকে সম্পূর্ণ স্থিতিশীল করে তোলার পর, উপযুক্ত সময়ে তা বেসরকারি মালিকানায় হস্তান্তর করা হবে। সরকার আশা করছে, এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পাঁচ বছরের মতো সময় লাগতে পারে। উল্লেখ্য, এই একীভূতকরণের কার্যক্রম বাস্তবায়নে গত ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরকে আহ্বায়ক করে একটি আট সদস্যের ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।