বেতন–পদোন্নতির দাবিতে রাস্তায় শিক্ষকরা, ক্লাস বন্ধ এক কোটি শিক্ষার্থীর

সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি

বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতির দাবিতে আজ রোববার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এতে দেশের সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি বিদ্যালয়ের প্রায় এক কোটি শিশু শিক্ষার্থী পাঠচ্যুত হয়েছে।

বিদ্যালয়ে এলেও শিক্ষকরা পাঠদান না করায় শিক্ষার্থীদের ফিরে যেতে হচ্ছে খালি হাতে।

শাহবাগে হামলার পর কর্মসূচি এগিয়ে আনলেন শিক্ষকরা : ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ডাকে এই কর্মবিরতি শুরু হয়। মূলত ১৫ নভেম্বরের পর কর্মবিরতির পরিকল্পনা থাকলেও, শনিবার (৮ নভেম্বর) শাহবাগে ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার পরই শিক্ষকরা তা আগাম শুরু করেন।

সংগঠনের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন,

“আমাদের ওপর হামলায় বহু শিক্ষক আহত হয়েছেন, কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে সারাদেশের শিক্ষকরা একযোগে ক্লাস বর্জন করেছেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।”

তিনি আরও জানান, তারা ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনে “স্কুলে তালা ঝুলিয়ে” দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন।

বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ

আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু পরীক্ষার তিন সপ্তাহ আগে শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় অভিভাবকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রজব আলী বলেন,

“আমার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, এবার বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। এখন ক্লাস বন্ধ থাকায় তার প্রস্তুতি ব্যাহত হচ্ছে। এতে ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

এক বছরে দ্বিতীয় দফা আন্দোলন

চলতি বছর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার কর্মবিরতিতে গেলেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। এর আগে মে মাসে তারা ধাপে ধাপে এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা এবং আধাবেলা কর্মবিরতি পালনের পর ২৬ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যান।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের আশ্বাসে ১ জুন তারা ক্লাসে ফেরেন। তবে শিক্ষকদের অভিযোগ—প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি।


১১তম গ্রেডের আশ্বাস, শিক্ষকদের দাবি ১০ম গ্রেড

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর নেতা আবুল কাশেম জানান, দীর্ঘদিন ধরে সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডের দাবি জানালেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এখন নতুন পে-কমিশনের আলোকে তারা ১০ম গ্রেডের দাবি তুলেছেন।

“সরকার বলছে ১১তম গ্রেড দেবে, কিন্তু এখনো অনুমোদন দেয়নি। তাই আমরা দশম গ্রেডের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি,” বলেন তিনি।


‘দশম গ্রেড যৌক্তিক নয়’—অভিযোগ উপদেষ্টার

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন,

“প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন, তাই সহকারী শিক্ষকদের এক লাফে ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে আনা সম্ভব নয়। আমরা ১১তম গ্রেডের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।”

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু নূর মো. শামসুজ্জামানও জানান,

“সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছি। অনুমোদন পেলেই তা কার্যকর হবে।”


শিখন ঘাটতি বাড়ার আশঙ্কা

তিনি আরও বলেন,

“বার্ষিক পরীক্ষার আগে এ কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ ক্ষতির মুখে ফেলবে। বই পেতে দেরি, আগের কর্মবিরতি—সব মিলিয়ে শিখন ঘাটতি অনেক বেড়েছে।”

মন্তব্য করুন

দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে রোববার থেকে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি

দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকরা। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামসুদ্দিন মাসুদ।

তিনি বলেন, “দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল (রোববার) থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চলবে। একই সঙ্গে সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।”

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন ৩ লাখ ৮৪ হাজারেরও বেশি শিক্ষক, আর শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় এক কোটি

এদিকে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষকদের এই কর্মবিরতি ও আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

মন্তব্য করুন

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে নারীদের বিশেষ কোটা বাতিল: নতুন বিধিমালায় ৭ শতাংশ কোটা ও নতুন পদ সৃষ্টি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে নতুন বিধিমালা প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই নতুন বিধিমালায় সহকারী শিক্ষক পদে নারীদের জন্য নির্ধারিত বিশেষ ৬০ শতাংশ কোটা বাতিল করা হয়েছে। এর পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ অন্যান্যদের জন্য ৭ শতাংশ কোটা রেখে অবশিষ্ট ৯৩ শতাংশ পদ মেধাভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে আলাদা পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

নতুন বিধিমালা ও কোটা পরিবর্তন: ২৮ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে 'সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫' নামে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

নতুন বিধিমালার অধীনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদের ৯৩ শতাংশ হবে মেধাভিত্তিক। বাকি ৭ শতাংশ পদ নিম্নলিখিত কোটার আওতায় রাখা হয়েছে:

  • মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য: ৫ শতাংশ

  • ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীদের জন্য: ১ শতাংশ

  • শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্য: ১ শতাংশ

তবে কোটার আওতায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেই শূন্য পদগুলো মেধার ভিত্তিতেই পূরণ করা হবে।

আগের কোটা বাতিল: স্মরণীয় যে, ২০১৯ সালের বিধিমালা অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে নারীদের জন্য ৬০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিল। বাকি ৪০ শতাংশের মধ্যে ২০ শতাংশ ছিল পুরুষদের জন্য এবং ২০ শতাংশ ছিল পোষ্য কোটা। নতুন বিধিমালা কার্যকর হওয়ার ফলে 'সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯' রহিত বলে বিবেচিত হবে।

অন্যান্য পরিবর্তন:

  • নিয়োগ পদ্ধতি: সরাসরি নিয়োগ ও পদোন্নতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ থাকছে।

  • নিয়োগের স্থান: নিয়োগ প্রক্রিয়া উপজেলা ও ক্ষেত্রবিশেষে থানাভিত্তিক হবে।

  • বিষয়ভিত্তিক সংরক্ষণ: বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের জন্য ২০ শতাংশ পদ এবং অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের জন্য ৮০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থাকবে।

  • নতুন পদ সৃষ্টি: সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রথমবারের মতো আলাদা পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন দিগন্ত: ৫৩৪ বিদ্যালয়ে ২৬১৭ কোটি টাকার ‘রূপান্তর যাত্রা’ শুরু

 দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও মানসম্মত করতে এক বিশাল অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচির সূচনা করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। প্রায় ২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে, সারাদেশের ৫৩৪টি নির্বাচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেহারা পাল্টে দেওয়ার এই মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

‘বিদ্যমান মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১০টি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায়, গ্রামীণ ও নগরীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এক নতুন রূপে সেজে উঠবে।

 

যেসব স্কুলে আসছে পরিবর্তনের ছোঁয়া

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মিরাজুল ইসলাম উকিল, এনডিসি স্বাক্ষরিত এক সাম্প্রতিক চিঠিতে এই উদ্যোগের বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুটি প্রধান ধারার বিদ্যালয় উপকৃত হবে:

১. মডেল স্কুলসমূহ: ৬৪টি জেলার বিদ্যমান ৪৮৮টি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলগুলোর তথ্য ইতিমধ্যেই আইপিইএমআইএস সিস্টেম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। ২. সিটি কর্পোরেশন এলাকার স্কুলসমূহ: দেশের ১০টি সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে নির্বাচিত ৪৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই ৪৬টি বিদ্যালয়ের তালিকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কর্তৃক প্রত্যয়নসহ অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে।

 

২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকার রূপরেখা

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই বিশাল অঙ্কের অর্থ (২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা) ব্যয় হবে বিদ্যালয়ের মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়নে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করবে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • আধুনিক শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ: শিক্ষার্থীদের আরামদায়ক ও কার্যকর পাঠদানের পরিবেশ সৃষ্টি।

  • স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন: স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও পরিচ্ছন্নতার মান নিশ্চিত করা।

  • বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ: নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

  • প্রশাসনিক ভবনের আধুনিকায়ন: শিক্ষকদের জন্য উন্নত কর্মপরিবেশ তৈরি।

  • খেলার মাঠের উন্নয়ন: শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য উপযুক্ত খেলার পরিবেশ তৈরি।

 

সমন্বিত প্রচেষ্টায় বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও সঠিক নির্বাচন নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৪৬টি বিদ্যালয়ের তালিকা প্রেরণের ক্ষেত্রে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রত্যয়নপত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এই ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশ আরও উন্নত হবে। এর ফলস্বরূপ, শিশুরা বিদ্যালয়ে আসার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হবে এবং জাতি গঠনের ভিত্তি আরও মজবুত হবে।

এই প্রকল্প কেবল ইট-সিমেন্টের উন্নয়ন নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নত শিক্ষণ-শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করার এক সুদূরপ্রসারী বিনিয়োগ, যা বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় এক নতুন প্রাণের সঞ্চার করবে।

মন্তব্য করুন

শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিতকরণ: ১৬৫ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে 'স্কুল ফিডিং' কর্মসূচি শুরু হচ্ছে নভেম্বরে

আগামী নভেম্বর মাস থেকে দেশের ১৬৫টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা পুষ্টিকর খাবার পেতে শুরু করবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু নূর মোহাম্মদ শামসুজ্জামান সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মহাপরিচালক জানান, নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখ থেকে এই 'স্কুল ফিডিং' কার্যক্রমটি চালু হবে। কর্মসূচির আওতায় দেশের ১৬৫টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট ৩১ লাখ শিশুকে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হবে।

তিনি জানান, সপ্তাহে পাঁচ দিন শিশুদের ডিম, দুধ, কলা, পাউরুটি, বিস্কুট এবং দেশীয় ফলসহ বিভিন্ন খাবার দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ব্যতিক্রম: দারিদ্র্যের হার অনুযায়ী বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য ব্যবহার করে প্রতিটি জেলা থেকে সবচেয়ে দরিদ্র একটি করে উপজেলাকে এই কর্মসূচির জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। নির্বাচিত উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খাবার দেওয়া হবে। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার সকল উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের আওতায় থাকবে।

মহাপরিচালক আশাবাদ ব্যক্ত করেন, মানসম্মত পুষ্টিকর খাবার যেমন—ডিম, দুধ, কলা, পাউরুটি, উন্নত মানের বিস্কুট ও মৌসুমি ফল সরবরাহ করার মাধ্যমে শিশুরা স্কুলে আরও বেশি মনোযোগী হবে এবং তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। এর ফলে বিদ্যালয়ে শিশুদের ঝরে পড়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

মন্তব্য করুন

নাটোর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচির শুরু

নাটোরের গুরুদাসপুরের খুবজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন
নাটোরের গুরুদাসপুরের খুবজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) নাটোরের গুরুদাসপুরের খুবজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে এই ফিডিং কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি পুষ্টিহীনতা ও বিদ্যালয় চলাকালে শিশুদের ক্ষুধা দূর করতে সহায়তা করবে, ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আরও মনোযোগী হবে এবং বিদ্যালয়ে আসার আগ্রহ বাড়বে। তিনি জানান, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে এই উদ্যোগটি সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মসূচি।

অনুষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, নাটোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আরিফ হোসেন এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) আবাসিক প্রতিনিধি ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ডমেনিকো স্কালপেল্লি। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।

‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’র আওতায় ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫০টি উপজেলার ১৯ হাজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ লাখ ১৩ হাজার শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে পাঁচ দিন ফর্টিফাইড বিস্কুট, কলা বা মৌসুমি ফল, বনরুটি, ডিম এবং ইউএইচটি দুধ সরবরাহ করা হবে।

এতে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ৮০ শতাংশের বেশি হবে, ঝরে পড়া কমবে, প্রতি বছর প্রকৃত ভর্তির হার ১০ শতাংশের বেশি বাড়বে এবং শিশুদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখার হার ৯৯ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের হার ৯০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাবে।

পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এই কর্মসূচি বিস্তারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।

মন্তব্য করুন

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতিতে অভিজ্ঞতা বাড়ল: নতুন নিয়োগ বিধিমালার গেজেট প্রকাশ

 সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালার বড় ধরনের পরিবর্তন এনে নতুন গেজেট প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই নতুন বিধিমালায় প্রধান শিক্ষক পদে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় চাকরির অভিজ্ঞতা ৮ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করা হয়েছে। এছাড়া নিয়োগের যোগ্যতা, কোটা এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রেও আনা হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

নতুন বিধিমালায় পরিবর্তন: গত বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে 'সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫' জারি করা হয়। এই বিধিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং এর মাধ্যমে আগের 'সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯' রহিত হয়ে যাবে।

প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া: নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক পদের ৮০ শতাংশ পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে এবং বাকি ২০ শতাংশ পদে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে পদোন্নতির যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সেই শূন্যপদগুলোও সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

পদোন্নতির যোগ্যতা (সহকারী শিক্ষকদের জন্য): প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জন্য সহকারী শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক (সঙ্গীত) বা সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা) পদে কর্মরত শিক্ষকদের এখন মৌলিক প্রশিক্ষণ ও চাকরি স্থায়ীকরণসহ কমপক্ষে ১২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ২০১৯ সালের বিধিমালায় এই অভিজ্ঞতা ছিল ৮ বছর।

সরাসরি নিয়োগের যোগ্যতা: সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। তবে শিক্ষাজীবনের কোনো স্তরে তৃতীয় বিভাগ অথবা সমমানের জিপিএ বা সিজিপিএ গ্রহণযোগ্য হবে না। এছাড়া, প্রার্থীদের অবশ্যই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

আসন্ন নিয়োগ কার্যক্রম: এই নতুন বিধিমালা অনুযায়ী আগামীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি আগস্ট মাসের মধ্যেই সহকারী শিক্ষকের প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হতে পারে। এছাড়া, দেশের প্রায় ৪০ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের বিপুলসংখ্যক শূন্যপদে শিগগির পদোন্নতি ও সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

মন্তব্য করুন
×