শিক্ষকদের ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার দাবি অযৌক্তিক: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেড থেকে সরাসরি ১০ম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার যে দাবি তুলেছেন, সে বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার মন্তব্য করেছেন যে, এক লাফে ১০ম গ্রেডে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই। তিনি বলেন, অধিকাংশ সহকারী শিক্ষকই মনে করেন, এ দাবি বাস্তবসম্মত নয়।

ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার আরও বলেন, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করা হলেও সাধারণ শিক্ষকদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় তাদের একই গ্রেডে আনা সম্ভব নয়। তাই একবারে ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে, তিনি জানিয়েছেন যে, সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেডের সুযোগ তৈরি করতে কাজ চলছে। পাশাপাশি, এ মুহূর্তে আন্দোলনে যাওয়াকে অযৌক্তিক মনে করেন তিনি।

অধ্যাপক রায় পোদ্দার প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ভূমিকা নিয়ে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত মতবিনিময় সভা শেষে এসব মন্তব্য করেন। সভায় বিভিন্ন প্রশাসনিক ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শিক্ষকদের নৈতিকতা, ব্যবহারিক দক্ষতা, সহশিক্ষা কার্যক্রমসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

এদিকে, তিনি আরও জানান, সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে। এখন ৮০ শতাংশ পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে, যা আগে ছিল ৬৫ শতাংশ। বাকি ২০ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূর্ণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিতকরণ: ১৬৫ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে 'স্কুল ফিডিং' কর্মসূচি শুরু হচ্ছে নভেম্বরে

আগামী নভেম্বর মাস থেকে দেশের ১৬৫টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা পুষ্টিকর খাবার পেতে শুরু করবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু নূর মোহাম্মদ শামসুজ্জামান সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মহাপরিচালক জানান, নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখ থেকে এই 'স্কুল ফিডিং' কার্যক্রমটি চালু হবে। কর্মসূচির আওতায় দেশের ১৬৫টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট ৩১ লাখ শিশুকে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হবে।

তিনি জানান, সপ্তাহে পাঁচ দিন শিশুদের ডিম, দুধ, কলা, পাউরুটি, বিস্কুট এবং দেশীয় ফলসহ বিভিন্ন খাবার দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ব্যতিক্রম: দারিদ্র্যের হার অনুযায়ী বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য ব্যবহার করে প্রতিটি জেলা থেকে সবচেয়ে দরিদ্র একটি করে উপজেলাকে এই কর্মসূচির জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। নির্বাচিত উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খাবার দেওয়া হবে। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার সকল উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের আওতায় থাকবে।

মহাপরিচালক আশাবাদ ব্যক্ত করেন, মানসম্মত পুষ্টিকর খাবার যেমন—ডিম, দুধ, কলা, পাউরুটি, উন্নত মানের বিস্কুট ও মৌসুমি ফল সরবরাহ করার মাধ্যমে শিশুরা স্কুলে আরও বেশি মনোযোগী হবে এবং তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। এর ফলে বিদ্যালয়ে শিশুদের ঝরে পড়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

মন্তব্য করুন

ইউনেস্কোর কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার ২০২৫ পেল চলনবিলের ‘ভাসমান স্কুল’

ভাসমান স্কুল
ভাসমান স্কুল

বাংলাদেশের চলনবিল এলাকার সৌরশক্তিচালিত 'ভাসমান স্কুল' ইউনেস্কোর মর্যাদাপূর্ণ কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার ২০২৫ অর্জন করেছে। এটি শিক্ষায় নতুন উদ্ভাবন এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রসারে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মান, যা চীনা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রদান করা হয়।

শুক্রবার সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই পুরস্কার প্রাপ্তির তথ্য জানানো হয়েছে। বিশ্বের শত শত মনোনয়নের মধ্য থেকে ইউনেস্কো যে তিনটি উদ্যোগকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করেছে, তার মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশের সিধুলাই ভাসমান স্কুল, আয়ারল্যান্ডের লার্ন উইথ নালা ই-লার্নিং এবং মরক্কোর সেকেন্ড চান্স স্কুল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রাম।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি ২৭ সেপ্টেম্বর চীনের শানডং প্রদেশের চুফু শহরে, কনফুসিয়াসের জন্মস্থানে অনুষ্ঠিত হয়। এই স্কুলের স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান তার প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থার পক্ষে ট্রফি ও সনদ গ্রহণ করেন।

চলনবিল অঞ্চলে বেড়ে ওঠা মোহাম্মদ রেজোয়ান শৈশবে প্রতি বছর বর্ষাকালে তার স্কুল বন্ধ হয়ে যেতে দেখতেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি ২০০২ সালে একটি নৌকাকে স্কুলে রূপান্তরিত করার উদ্ভাবনী উদ্যোগ নেন। তার এই উদ্যোগটি বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্কুল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সৌরশক্তিনির্ভর এসব ভাসমান স্কুল এখনো লাইব্রেরি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে চলেছে, যা বর্ষায় চারদিকে পানিবেষ্টিত গ্রামগুলোতেও শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সহায়তা করে।

ইউনেস্কো এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছে, বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি উদ্ভাবনী উপায়ে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়াই এই ভাসমান স্কুলের সাফল্যের মূল কারণ।

বর্তমানে সিধুলাইয়ের ভাসমান স্কুলের এই মডেল বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অনুসরণ করছে। শুধু তাই নয়, এই অনন্য উদ্যোগ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশেও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

মন্তব্য করুন

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতিতে অভিজ্ঞতা বাড়ল: নতুন নিয়োগ বিধিমালার গেজেট প্রকাশ

 সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালার বড় ধরনের পরিবর্তন এনে নতুন গেজেট প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই নতুন বিধিমালায় প্রধান শিক্ষক পদে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় চাকরির অভিজ্ঞতা ৮ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করা হয়েছে। এছাড়া নিয়োগের যোগ্যতা, কোটা এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রেও আনা হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

নতুন বিধিমালায় পরিবর্তন: গত বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে 'সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫' জারি করা হয়। এই বিধিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং এর মাধ্যমে আগের 'সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯' রহিত হয়ে যাবে।

প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া: নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক পদের ৮০ শতাংশ পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে এবং বাকি ২০ শতাংশ পদে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে পদোন্নতির যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সেই শূন্যপদগুলোও সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

পদোন্নতির যোগ্যতা (সহকারী শিক্ষকদের জন্য): প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জন্য সহকারী শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক (সঙ্গীত) বা সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা) পদে কর্মরত শিক্ষকদের এখন মৌলিক প্রশিক্ষণ ও চাকরি স্থায়ীকরণসহ কমপক্ষে ১২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ২০১৯ সালের বিধিমালায় এই অভিজ্ঞতা ছিল ৮ বছর।

সরাসরি নিয়োগের যোগ্যতা: সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। তবে শিক্ষাজীবনের কোনো স্তরে তৃতীয় বিভাগ অথবা সমমানের জিপিএ বা সিজিপিএ গ্রহণযোগ্য হবে না। এছাড়া, প্রার্থীদের অবশ্যই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

আসন্ন নিয়োগ কার্যক্রম: এই নতুন বিধিমালা অনুযায়ী আগামীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি আগস্ট মাসের মধ্যেই সহকারী শিক্ষকের প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হতে পারে। এছাড়া, দেশের প্রায় ৪০ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের বিপুলসংখ্যক শূন্যপদে শিগগির পদোন্নতি ও সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

মন্তব্য করুন

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ: আবেদন চলছে, বেড়েছে সময়

বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য একটি বড় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বর্তমানে এই পদে আবেদন প্রক্রিয়া চলছে এবং আবেদনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।

আবেদনের যোগ্যতা ও বেতনস্কেল:

  • শিক্ষাগত যোগ্যতা: প্রার্থীদের যেকোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএ-সহ স্নাতক অথবা স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি থাকতে হবে। তবে শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ বা এর সমমানের সিজিপিএ থাকলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

  • বেতন গ্রেড: এই পদে চাকরি পেলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকেরা $12500 - 30230$ টাকা স্কেলে এবং প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকেরা $11300 - 27230$ টাকা স্কেলে বেতন পাবেন।

পরীক্ষার পদ্ধতি:

প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য মোট $100$ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে। এই পরীক্ষার পদ্ধতি দুটি ধাপে বিভক্ত:

  1. লিখিত পরীক্ষা ( $90$ নম্বর): লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, দৈনন্দিন বিজ্ঞান এবং সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) থেকে প্রশ্ন করা হবে। এই ধাপে উত্তীর্ণ হতে হলে প্রার্থীকে ন্যূনতম $50\%$ নম্বর পেতে হবে।

  2. মৌখিক পরীক্ষা ($10$ নম্বর): লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরাই কেবল $10$ নম্বরের মৌখিক বা ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

মন্তব্য করুন

প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন দিগন্ত: ৫৩৪ বিদ্যালয়ে ২৬১৭ কোটি টাকার ‘রূপান্তর যাত্রা’ শুরু

 দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও মানসম্মত করতে এক বিশাল অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচির সূচনা করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। প্রায় ২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে, সারাদেশের ৫৩৪টি নির্বাচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেহারা পাল্টে দেওয়ার এই মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

‘বিদ্যমান মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১০টি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায়, গ্রামীণ ও নগরীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এক নতুন রূপে সেজে উঠবে।

 

যেসব স্কুলে আসছে পরিবর্তনের ছোঁয়া

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মিরাজুল ইসলাম উকিল, এনডিসি স্বাক্ষরিত এক সাম্প্রতিক চিঠিতে এই উদ্যোগের বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুটি প্রধান ধারার বিদ্যালয় উপকৃত হবে:

১. মডেল স্কুলসমূহ: ৬৪টি জেলার বিদ্যমান ৪৮৮টি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলগুলোর তথ্য ইতিমধ্যেই আইপিইএমআইএস সিস্টেম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। ২. সিটি কর্পোরেশন এলাকার স্কুলসমূহ: দেশের ১০টি সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে নির্বাচিত ৪৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই ৪৬টি বিদ্যালয়ের তালিকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কর্তৃক প্রত্যয়নসহ অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে।

 

২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকার রূপরেখা

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই বিশাল অঙ্কের অর্থ (২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা) ব্যয় হবে বিদ্যালয়ের মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়নে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করবে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • আধুনিক শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ: শিক্ষার্থীদের আরামদায়ক ও কার্যকর পাঠদানের পরিবেশ সৃষ্টি।

  • স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন: স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও পরিচ্ছন্নতার মান নিশ্চিত করা।

  • বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ: নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

  • প্রশাসনিক ভবনের আধুনিকায়ন: শিক্ষকদের জন্য উন্নত কর্মপরিবেশ তৈরি।

  • খেলার মাঠের উন্নয়ন: শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য উপযুক্ত খেলার পরিবেশ তৈরি।

 

সমন্বিত প্রচেষ্টায় বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও সঠিক নির্বাচন নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৪৬টি বিদ্যালয়ের তালিকা প্রেরণের ক্ষেত্রে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রত্যয়নপত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এই ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশ আরও উন্নত হবে। এর ফলস্বরূপ, শিশুরা বিদ্যালয়ে আসার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হবে এবং জাতি গঠনের ভিত্তি আরও মজবুত হবে।

এই প্রকল্প কেবল ইট-সিমেন্টের উন্নয়ন নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নত শিক্ষণ-শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করার এক সুদূরপ্রসারী বিনিয়োগ, যা বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় এক নতুন প্রাণের সঞ্চার করবে।

মন্তব্য করুন

বিসিএস থেকে সরকারি প্রাথমিকে স্বপ্নের সোপান: ১১১ জন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ

জাতির ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১১১ জন প্রধান শিক্ষক (নন-ক্যাডার দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে মেধাবী অথচ পদ স্বল্পতার কারণে ক্যাডার সার্ভিসে স্থান পাননি, ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এমন যোগ্য প্রার্থীদের সরকারি প্রাথমিক শিক্ষার মূল স্রোতে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (BPSC) সচিবালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে এই মেধাবীরা এখন দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ পেলেন। আজ (বুধবার) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়েছে।

 

সুযোগ ও সম্মানের নতুন দিগন্ত

নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকেরা জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী গ্রেড-১২ (টাকা ১১,৩০০-২৭, ১৩০) বেতনে যোগদান করবেন। এটি কেবল একটি চাকরি নয়, বরং দেশের তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষা কাঠামোকে শক্তিশালী করার একটি মহৎ দায়িত্ব।

 

নিয়মাবলীতে ভবিষ্যতের হাতছানি

নতুন প্রধান শিক্ষকদের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ও শর্তাবলী দেওয়া হয়েছে, যা তাদের পেশাগত জীবনে শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের পথ দেখাবে:

১. শিক্ষানবিশকাল: যোগদানের পর প্রথম দুই বছর তাদের শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে হবে। এই সময়কাল তাদের দক্ষতা ও কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২. যোগদানের সময়সীমা: নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অবশ্যই ১০ নভেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে তাদের পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যোগদান করতে ব্যর্থ হলে, তাদের নিয়োগ আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে। ৩. আবশ্যিক প্রশিক্ষণ: মানসম্পন্ন পাঠদান ও ব্যবস্থাপনার স্বার্থে, যোগদানের পরবর্তী চার (৪) বছরের মধ্যে তাদের ‘প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণ (বিটিপিটি)’ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ৪. যোগদান প্রক্রিয়া: শিক্ষকেরা তাদের যোগদানপত্র সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর দাখিল করবেন। অফিসার যোগদানপত্র গ্রহণপূর্বক তাদের একটি প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবেন, যা তাদের সরকারি শিক্ষক হিসেবে নতুন জীবনের সূচনা নিশ্চিত করবে।

এই নিয়োগের মাধ্যমে মেধাবী তরুণদের সরকারি প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো, যা নিঃসন্দেহে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে এক নতুন প্রেরণা সৃষ্টি করবে।

মন্তব্য করুন
×