আকতার হোসেন
প্রকাশ : অক্টোবর ১৬, ২০২৫
অনলাইন সংস্করণ

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ: পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ, জিপিএ-৫ কমেছে প্রায় ৭৭ হাজার

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার সারাদেশে গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ কম।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় দেশের ৯টি সাধারণ, কারিগরি ও মাদরাসা—মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ড একযোগে ফল প্রকাশ করে। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বোর্ডের ওয়েবসাইট ও এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে পারছেন।

এ বছর মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন। ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারী ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন, আর ফেল করেছেন ৫ লাখ ৮ হাজার ৭০১ জন। ফলে পাসের হার হয়েছে ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, আর ফেলের হার ৪১ দশমিক ১৭ শতাংশ।

এ বছর সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। সে হিসেবে এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।

ফলাফলে এবারও সব দিক থেকে এগিয়ে ছাত্রীদের পারফরম্যান্স। মোট পাস করা শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৬ জন এবং ছাত্র ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৪ জন। ছাত্রীদের গড় পাসের হার ৬২ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যেখানে ছাত্রদের পাসের হার ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।

একইভাবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও এগিয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা। মোট ৬৯ হাজার ৯৭ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ৩৭ হাজার ৪৪ জন এবং ছাত্র ৩২ হাজার ৫৩ জন।

🔸 সামগ্রিকভাবে এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে নিম্নমুখী হলেও, ছাত্রীদের সাফল্য এখনো আশাব্যঞ্জক।

 
মন্তব্য করুন

ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম

ফল খারাপ হলেও প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হয়েছে

বছর এইচএসসি সমমানের পরীক্ষায় সারাদেশে পাসের হার কমলেওপ্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হয়েছেবলে মন্তব্য করেছেন রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে ফলাফল প্রকাশের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,

সরকার চেয়েছে যেন এবার প্রকৃত মেধার সঠিক মূল্যায়ন হয়। তাই প্রশ্নপত্রের ধরন খাতা মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে সামগ্রিক ফলাফল কিছুটা কম হলেও মেধাবীদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “প্রশ্নের ধরন হঠাৎ পরিবর্তন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। আগে থেকে জানালে তারা আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারতো।

অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের কলেজের ফলাফল সন্তোষজনক। এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। ভিকারুননিসা স্কুল ওরিয়েন্টেড কলেজএখানে লটারির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের আমরা তৈরি করেছি। মেধার তারতম্য থাকতেই পারে, সবাই সমান মেধাবী নয়।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বছর এইচএসসিতে অংশ নেয় ,৫১৪ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশ নেয় ,৪৯৫ জন এবং পাস করেছে ,৪৩৪ জন। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অকৃতকার্য হয়েছে ৮০ জন শিক্ষার্থী।

বিভাগভিত্তিক ফলাফল অনুযায়ী

  • বিজ্ঞান বিভাগে: পাস করেছে ,৮০৭ জন, ফেল ৬০ জন, জিপিএ পেয়েছে ৭৯৭ জন।
  • ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে: পাস ৩১৬ জন, ফেল ১১ জন, জিপিএ পেয়েছে ১০৫ জন।
  • মানবিক বিভাগে: পাস ৩১১ জন, ফেল জন, জিপিএ পেয়েছে ৮৪ জন।

তিন বিভাগে মোট জিপিএ পেয়েছে ৯৮৬ জন শিক্ষার্থী। অধ্যক্ষের ভাষায়, “এবারের ফলাফল হয়তো আগের মতো ঝলমলে নয়, কিন্তু এটি বাস্তব সৎ মূল্যায়নের প্রতিফলন।

 

মন্তব্য করুন

২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়: ৫ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়ার পেছনের কারণ ও বিশ্লেষণ

২০২৫ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৮.৮৩ শতাংশ। এই ফল গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ফলস্বরূপ, মোট ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে লাখ হাজার ৭০১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। এই ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষার্থীর ফেল করা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, পরীক্ষা মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং কোভিড-পরবর্তী শিখন-ঘাটতির গভীর বাস্তবতাকে উন্মোচন করেছে। শিক্ষা উপদেষ্টা এটিকে 'অস্বস্তিকর হলেও বাস্তবভিত্তিক' আখ্যা দিয়ে দীর্ঘদিনের 'শেখায় সংকট' 'ন্যায্য মূল্যায়নের' ওপর জোর দিয়েছেন।

১. অকৃতকার্যতার পরিসংখ্যানগত চিত্র

২০২৫ সালের এইচএসসি সমমানের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা শুধু একটি সংখ্যা নয়, এটি একটি alarm bell:

সূচক

সংখ্যা / হার

মোট পরীক্ষার্থী

১২,৩৫,৬৬১ জন

মোট উত্তীর্ণ

৭,২৬,৯৬০ জন

মোট অকৃতকার্য

৫,০৮,৭০১ জন

পাসের হার

৫৮.৮৩%

অকৃতকার্যের হার

প্রায় ৪১.১৭%

জিপিএ- প্রাপ্তি

৬৯,০৯৭ জন

 

  • বিশাল ব্যবধান: গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে প্রায় ১৮.৯৫ শতাংশ পয়েন্ট। এর অর্থ, ২০২৪ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরীক্ষার্থী এবার ফেল করেছে।
  • জিপিএ-৫ ধস: জিপিএ- প্রাপ্তির সংখ্যাও কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন, যা নির্দেশ করে শুধু পাসের হার নয়, মানসম্মত ফলাফল অর্জনের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের পতন ঘটেছে।

২. ফল বিপর্যয়ের মূল কারণসমূহ: শিক্ষা উপদেষ্টার দৃষ্টিতে

অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার এই ফলাফলকে 'বাস্তবতার প্রতিফলন' হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়ার পেছনে নিম্নলিখিত কারণগুলো সরাসরি দায়ী:

ক. 'ন্যায্য মূল্যায়নে' ফিরে আসা

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নে 'নম্বর বাড়িয়ে দেখানোর' একটি প্রবণতা ছিল। শিক্ষা উপদেষ্টা এইবার সেই 'অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি' সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে **'ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততা'**কে বেছে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এর ফলে:

  • গ্রেস মার্কস বন্ধ: ধারণা করা হচ্ছে, পাস নম্বর (৩৩) থেকে সামান্য কম পাওয়া শিক্ষার্থীদের যে গ্রেস মার্কস দিয়ে পাস করিয়ে দেওয়ার অলিখিত প্রবণতা ছিল, এবার তা কঠোরভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
  • পরীক্ষকের কঠোরতা: খাতা দেখার ক্ষেত্রে পরীক্ষকদের বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশিকা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়, যার ফলে সামান্য ঘাটতি বা ত্রুটির কারণেও শিক্ষার্থীরা অনুত্তীর্ণ হয়েছে।

খ. দীর্ঘদিনের 'শেখার সংকট'

শিক্ষা উপদেষ্টার মতে, এই ফল বিপর্যয় রাতারাতি তৈরি হয়নি। এটি প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু হওয়া 'শেখার ঘাটতি'- চূড়ান্ত প্রতিফলন। শিক্ষার্থীরা বছরের পর বছর ধরে যথাযথ ভিত্তিমূলক শিক্ষা না পেয়ে উচ্চশিক্ষা স্তরে আসায়, পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস স্বাভাবিক মূল্যায়নের মুখোমুখি হয়ে তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

গ. কোভিড-পরবর্তী 'স্বাভাবিক' পরীক্ষা পদ্ধতি

২০২৫ সালের পরীক্ষার্থীরাই প্রথম ব্যাচ, যারা কোভিড-১৯ মহামারীর অস্বাভাবিকতা কাটিয়ে পূর্ণ নম্বর, পূর্ণ সময় এবং সম্পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়েছে।

  • ২০২০ (অটোপাস): এই পরীক্ষার্থীরা যখন দশম শ্রেণিতে ছিল, তখন তারা অটোপাস পেয়েছিল।
  • ২০২১-২০২২ (সংক্ষিপ্ত সিলেবাস): একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতেও তারা পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পড়ার সুযোগ পায়নি।
  • শিখন-ঘাটতি: স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত থাকার কারণে তাদের শিখন-ঘাটতি (Learning Gap) ছিল বিশাল, যা পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষায় স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে।

ঘ. বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা

ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক . খন্দোকার এহসানুল কবিরের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ইংরেজি, গণিত এবং তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT)-এর মতো মৌলিক বিষয়গুলোতে দুর্বল ছিল। সকল বিষয়ে ফেল করার কারণে সামগ্রিক পাসের হার হ্রাস পেয়েছে।

৩. বোর্ডভিত্তিক তারতম্য শিক্ষার বৈষম্য

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভিন্ন বোর্ডের পাসের হারেও বিশাল তারতম্য রয়েছে:

  • ঢাকা বোর্ড: ৬৪.৬২% (অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় এগিয়ে)
  • কুমিল্লা বোর্ড: ৪৮.৮৬% (সবচেয়ে কম পাসের হার)
  • মাদরাসা বোর্ড: ৭৫.৬১% (সাধারণ বোর্ডগুলোর তুলনায় এগিয়ে)

কুমিল্লা বোর্ড যশোর বোর্ডের মতো অনেক অঞ্চলে পাসের হার ৫০ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। এই তারতম্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান, শিক্ষকের সক্ষমতা, গ্রামীণ শহর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সুযোগের বৈষম্য এবং বোর্ডের প্রশ্ন মূল্যায়ন পদ্ধতির ভিন্নতার দিকে ইঙ্গিত করে।

 

মন্তব্য করুন

স্কুল-কলেজ নির্মাণে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম:

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের তদন্ত শুরু

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) আওতাধীন স্কুল ও কলেজের একতলা ভবন নির্মাণের কাজ নির্ধারিত ৯ মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনেক ভবনের কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। অথচ বরাদ্দ অর্থের ৯০ শতাংশই ঠিকাদারদের দেওয়া হয়েছে, আর কাজের মানও খুব নিম্নমানের।

অনেক প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। 이에 শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ গত ২৩ অক্টোবর ইইডির প্রধান প্রকৌশলীকে পাঁচ প্রকৌশলী ও ১১ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১২ নভেম্বর ইইডি আদেশ জারি করে। ১৭ নভেম্বর ওই পাঁচ প্রকৌশলী ও ১১ ঠিকাদার প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে নির্দেশিত হয়েছেন।

অনিয়মের অভিযোগে থাকা প্রকৌশলীদের মধ্যে রয়েছেন:

  • তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী-২ মো. আসাদুজ্জামান

  • তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পিআরএল) মীর মুয়াজ্জেম হোসেন

  • নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. জরজিসুর রহমান

  • ঢাকা মেট্রোর উপসহকারী প্রকৌশলী এ কে এম মনিরুজ্জামান

  • উপসহকারী প্রকৌশলী জামিল হোসেন

একাধিক সূত্রের দাবি, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতা ও ওএসডি প্রকৌশলী রায়হান বাদশার সঙ্গে আসাদুজ্জামান ও জরজিসুরের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ফলে তাদের স্বপদে থাকা অবস্থায় তদন্ত কার্যক্রমের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ।

নবনিযুক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. তারেক আনোয়ার জাহেদী সাংবাদিককে জানান, “মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটি কাজ করছে।”

নাটোর জেলার একাধিক স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিলমারিয়া দাখিল মাদরাসার কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের ২২ জুন। ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার কাজের মাত্র ৩০ শতাংশ বাকি থাকলেও ঠিকাদারকে ৭০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে পালিয়ে গেছেন, ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারছে না।

একাধিক ঠিকাদারের অভিযোগ, ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে ‘লাইসেন্স বাণিজ্য’ চলছে। দিনাজপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আলমের প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ দেশে একাধিক জেলায় একচেটিয়া কাজ পাচ্ছে এবং লাইসেন্স ভাড়া বাবদ অর্থ রাজনৈতিক ফান্ডে যাচ্ছে। এর সঙ্গে প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান যুক্ত।

অভিযোগে আরও বলা হয়, বিদ্যুৎ প্রকৌশলী জরজিসুর রহমানকে অভিজ্ঞতা, বিভাগ বা মেধাক্রম ছাড়াই যান্ত্রিক নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

নাটোরের কয়েকটি স্কুল ও কলেজের নির্মাণে অসংখ্য কোটি টাকা বিল পরিশোধ হলেও কাজ শেষ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদার ও প্রকৌশলী মিলিত হয়ে বিল ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন।

তদন্ত কমিটি সোমবার সব পক্ষের বক্তব্য শুনবে এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেবে।

মন্তব্য করুন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষার পদ্ধতিতে পরিবর্তন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রামের পরীক্ষা পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি কোর্সের মোট নম্বরের ৮০ শতাংশ ফাইনাল পরীক্ষায় এবং ২০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়নে বরাদ্দ থাকবে।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ডিনের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে তত্ত্বীয় কোর্সের প্রশ্নের ধরন ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের পদ্ধতিতে পরিবর্তন কার্যকর হবে।

প্রশ্নপত্রের ধরন ও মূল্যায়ন কাঠামো

নতুন কাঠামো অনুযায়ী—

  • চার ক্রেডিট কোর্সে: ১২টি প্রশ্নের মধ্যে ৮টির উত্তর দিতে হবে। মোট নম্বর ৮০, সময় ৪ ঘণ্টা।

  • তিন ক্রেডিট কোর্সে: ৯টি প্রশ্নের মধ্যে ৬টির উত্তর দিতে হবে। মোট নম্বর ৬০, সময় ৩ ঘণ্টা।

  • দুই ক্রেডিট কোর্সে: ৬টি প্রশ্নের মধ্যে ৪টির উত্তর দিতে হবে। মোট নম্বর ৪০, সময় ২ ঘণ্টা।

প্রয়োজনে প্রতিটি প্রশ্নে সর্বোচ্চ তিনটি উপ-প্রশ্ন (ক, খ, গ বা a, b, c) রাখা যাবে।

ধারাবাহিক মূল্যায়নের ধরন

প্রতিটি তত্ত্বীয় কোর্সের মোট নম্বরের ২০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়নের জন্য নির্ধারিত থাকবে।

  • চার ক্রেডিট কোর্সে: অ্যাসাইনমেন্ট ও কুইজ ৫ নম্বর, ক্লাস উপস্থিতি ৫ নম্বর, এবং ইন-কোর্স পরীক্ষায় (দুটি ইন-কোর্সের গড়) ১০ নম্বরসহ মোট ২০।

  • তিন ক্রেডিট কোর্সে: অ্যাসাইনমেন্ট ও কুইজ ৪ নম্বর, উপস্থিতি ৩ নম্বর, ইন-কোর্স ৮ নম্বরসহ মোট ১৫।

  • দুই ক্রেডিট কোর্সে: অ্যাসাইনমেন্ট ও কুইজ ৩ নম্বর, উপস্থিতি ২ নম্বর, ইন-কোর্স ৫ নম্বরসহ মোট ১০।

ব্যবহারিক কোর্সের মূল্যায়ন

ব্যবহারিক কোর্সগুলোর মূল্যায়ন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সিলেবাস অনুযায়ী সম্পন্ন হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।নতুন এ পদ্ধতি কার্যকর হলে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিয়মিত অংশগ্রহণের গুরুত্ব আরও বাড়বে বলে শিক্ষাবিদরা মনে করছেন।

মন্তব্য করুন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বললেন

‘জিয়াউর রহমানের ওপর বিশ্বজুড়ে গবেষণা হয়’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেছেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এমন এক রাষ্ট্রনায়ক, যার ওপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা চলছে। কারণ, তিনি স্বাধীনতার পর একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের যে মৌলিক ভিত্তি প্রয়োজন, তা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সম্প্রতি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে জিয়া পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

উপাচার্য বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীন দেশের প্রশাসন, সামরিক বাহিনী ও রাজনীতির মধ্যে একটি কার্যকর ভারসাম্য গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বাংলাদেশে ‘উৎপাদনের রাজনীতি’ চালু করেন এবং মানুষকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করেন। এর মাধ্যমে জাতিকে আত্মপরিচয়ের শক্তিতে দৃঢ় করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যান। তিনি এই দেশে সকলের জন্য কথা বলা ও রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন, যার সুফল আমরা আজও পাচ্ছি।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জিয়া পরিষদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি প্রফেসর ড. ফকির রফিকুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ টি এম জাফরুল আযম।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আহমেদ শিশিম, গাজীপুর জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি মো. ইয়াকুব মিয়া, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল ইসলাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর সরকার।

মন্তব্য করুন

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আবারও নিশ্চিত করেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সময়মতো, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলকভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক নতুন ভোটার প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। গত ১৬ বছরের স্বৈরতন্ত্রে টানা তিনটি নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার কার্যকর হয়নি।

একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় কার্যক্রম স্থগিত থাকায় এবং পরে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল (স্থগিত) করায় আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যানের সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়। বৈঠকে আসন্ন নির্বাচন, অবৈধ অভিবাসন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, রোহিঙ্গা সংকট এবং বিমান ও নৌ খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়গুলো নিয়ে কথোপকথন হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের লক্ষ্যে লাখো মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে ‘জুলাই সনদ’ বাংলাদেশে একটি নতুন সূচনা করেছে।

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যান প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে চলমান সংলাপ ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজকে ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করেন। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের অপব্যবহার বেড়েই চলেছে।

এর জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাঁর সরকার নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বৈধ পথে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই নেতা মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন। মুহাম্মদ ইউনূস জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তরুণরা আশা হারিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন, তাই তাদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গোপসাগরে গবেষণার জন্য যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা জাহাজ কিনছে বাংলাদেশ। ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যান উড়োজাহাজ যোগাযোগ আরও জোরদারের আহ্বান জানান এবং জানান, এয়ারবাস ইন্টারন্যাশনের প্রধান শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারা কুক।

মন্তব্য করুন
×