দেশের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ছুটি কমছে: প্রস্তাব ৫৫-৬০ দিনে নামিয়ে আনার
শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি কমাতে এবং নিয়মিত পাঠদান নিশ্চিত করতে দেশের সরকারি-বেসরকারি সব প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ছুটি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বর্তমানে বছরে গড়ে ৭৫ দিন ছুটি দেওয়া হলেও, তা কমিয়ে ৫৫ থেকে ৬০ দিনে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কিছু দাবি মেনে নেওয়ার শর্তে নতুন ছুটির সিদ্ধান্ত মানার কথা জানানো হয়েছে।
ছুটি কমানোর পরিকল্পনা: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানান যে, বর্তমানে বছরে মাত্র ১৮০ দিন স্কুল খোলা থাকছে। বিভিন্ন আন্দোলন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণে অতিরিক্ত ছুটি যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখন ঘাটতি বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বার্ষিক ছুটির সংখ্যা ১৬ থেকে ২০ দিন কমিয়ে ৫৫ থেকে ৬০ দিনে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক পোদ্দার আরও জানান, এই কাজ বাস্তবায়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে।
শিক্ষকদের জন্য উদ্যোগ: শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে পর্যাপ্ত সময় নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষকদের শিক্ষাবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত রাখার উদ্যোগও নেওয়া হবে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিনই থাকবে; এই ছুটি অন্যভাবে সমন্বয় করা হবে।
উচ্চপর্যায়ের আলোচনা: এর আগে গত মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ সভায় ছুটি কমানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ছুটি কমানোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এখনো তাতে সম্মতি জানায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, শিক্ষার মান ও ধারাবাহিকতা রক্ষায় ছুটি কমিয়ে শিক্ষার সময় বাড়ানো প্রয়োজন।
সিদ্ধান্তের প্রাথমিক পর্যায়: যদিও বিষয়টি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। প্রস্তাবটি বর্তমানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পর্যালোচনাধীন আছে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
শিক্ষকদের শর্ত: এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষকরা ছুটি কমানোর এই সিদ্ধান্ত মানতে আপত্তি জানিয়েছেন, যতক্ষণ না তাঁদের পূর্বের দাবিগুলো পূরণ করা হয়। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক শামসুদ্দিন মাসুদ রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছুটি কমানোর আগে প্রাথমিক বিভাগকে 'নন-ভ্যাকেশনাল' (non-vacational) ঘোষণা করতে হবে। এটি হলে অবসরের পর শিক্ষকরা কিছু অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি, শিক্ষকদের তিন দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনও মেনে নিতে হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, জাতীয় দিবস ও প্রধান শিক্ষকের হাতে থাকা সংরক্ষিত ছুটিসহ ৭-৮ দিনের ছুটি শিক্ষকরা কখনোই ভোগ করতে পারেন না।
বিশ্লেষকদের অভিমত: শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে নিয়মিত পাঠদান অত্যন্ত জরুরি। তবে ছুটি কমানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মতামত এবং বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া উচিত।